বৃহস্পতিবার, ২৪শে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৮ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কিনতে রিটার্ন লাগবে না *** ঝুঁকিপূর্ণ সব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইসিকে চিঠি *** বাংলাদেশ ব্যাংকে নারীদের শর্ট স্লিভ ড্রেস ও লেগিংস নিষেধ, পরতে হবে শালীন পোশাক-হিজাব *** সচিবালয়ে ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ১২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা *** জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ঐতিহাসিক রায় দিলেন বিশ্ব আদালত *** প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিমানবাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ *** এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষা একই দিনে হচ্ছে না, নতুন রুটিন প্রকাশ *** বাগমারা বিদ্যালয়ের নাম বদল, নতুন নাম শহীদ জিয়া বিদ্যালয় *** মতপার্থক্য থাকলেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্য আরও দৃশ্যমান করার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার *** রক্ষণাবেক্ষণের কাজে কর্ণফুলী টানেলে ৪ দিন যান চলাচল সীমিত থাকবে

চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ ও বাসন্তীকে নিয়ে যা উঠে এসেছে নতুন গবেষণায়

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৪:৪৫ অপরাহ্ন, ৯ই এপ্রিল ২০২৫

#

চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের সময় বাসন্তী নামের এ নারীর জাল পরা ছবি ছাপা হয় পত্রিকায়। ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের কথা স্মরণ করে আবেগপ্লুত হয়ে পড়েন। বেশ কিছুক্ষণ কোনো কিছু বলতে পারেননি তিনি। পরে তিনি চোখ ছলছল অবস্থায় আবার বলতে শুরু করেন। আজ বুধবার (৯ই এপ্রিল) রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়।

অন্যদিকে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ ও এর ‘প্রতীক’ জাল পরা বাসন্তীর ছবির বিষয়ে নতুন তথ্য উঠে এসেছে ‘ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের’ অধ্যাপক নাওমি হোসাইনের গবেষণায়। তিনি বলেছেন, ‘দুর্ভিক্ষের জন্য অনেকেই শেখ মুজিবকে দায়ী করলেও এটাও স্পষ্ট যে, তিনি চেষ্টা করেছিলেন। দুর্ভিক্ষের সময় বাসন্তীর যে ছবিটি (আলোকচিত্র) ব্যাপক প্রচার পেয়েছিল, সেই ছবি আসলে সাজানো ছিল।’

চলতি বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় নাগরিক কমিটির আমন্ত্রণে দেশে এসে কমিটির  আয়োজিত এক আলোচনা সভায় দেওয়া বক্তব্যে নাওমি হোসাইন তার এ সংক্রান্ত গবেষণা থেকে গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয় তুলে ধরেন। ঢাকার বাংলামোটরে কমিটির আয়োজিত সভা শেষে নাওমি হোসাইনের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের আলাপ হয়। সেই আলাপচারিতা থেকে সুখবর ডটকমের পাঠকদের জন্য নির্বাচিত অংশ তুলে ধরা হলো- 

চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ নিয়ে ‘দ্য এইড ল্যাব: আন্ডারস্ট্যান্ডিং বাংলাদেশ’স আনএক্সপেক্টেড সাকসেস’ নামে বই লিখেছেন অধ্যাপক নাওমি হোসাইন। তার বাবা বাংলাদেশি আর মা আইরিশ। তিনি ব্রিটেনে থাকেন।

ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক নাওমি হোসাইনের গবেষণায় ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের পেছনে চারটি কারণ উঠে এসেছে। তার মতে, ‘চার কারণ হলো- ১৯৭৪ সালের মারাত্মক বন্যা, দুর্ভিক্ষ-অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক খাদ্যসহায়তার রাজনীতি এবং দেশীয় খাদ্য ও ত্রাণের রাজনীতি।’

‘কেন ওই দুর্ভিক্ষ’—এর প্রথম কারণ হিসেবে নাওমি বলেন, ‘১৯৭৪ সালে মারাত্মক বন্যা হয়েছিল। সেই বন্যায় অনেক মানুষ তাদের বাড়িঘর ও চাকরি হারিয়েছিলেন, ফসল নষ্ট হয়েছিল। অনেকে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন।’

দ্বিতীয় কারণ হিসেবে তিনি ‘দুর্ভিক্ষ-অর্থনীতির’ কথা বলেন। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘তখন পর্যাপ্ত খাদ্য ছিল না, কথাটি সম্ভবত সত্য নয়। এ প্রসঙ্গে নোবেল বিজয়ী ভারতের অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের এক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে নাওমি বলেন, ‘সম্ভবত পর্যাপ্ত খাদ্য ছিল, কিন্তু তা কেনার টাকা মানুষের কাছে ছিল না।’

১৯৭৪ সালের খাদ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে নাওমি হোসাইন বলেন, ‘চালের দাম তখন দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া ভারতে চোরাচালান ও সিন্ডিকেট ইত্যাদিও দুর্ভিক্ষের কারণ ছিল।’

দুর্ভিক্ষের তৃতীয় কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক খাদ্যসহায়তার রাজনীতির বিষয়টি উল্লেখ করেন ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের এ অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘তখন আমেরিকা এক বছরের বেশি সময়ের জন্য খাদ্যসহায়তা বন্ধ করে দিয়েছিল। কারণ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট দেশ কিউবার সঙ্গে বাণিজ্য করেছিল। ...মিসরকে তখন খাদ্যসহায়তা দেওয়া হলেও বাংলাদেশকে দেয়নি আমেরিকা।’

তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে আমেরিকা বাংলাদেশকে তাদের নীতি গ্রহণে বাধ্য করতে চেয়েছিল। চতুর্থ কারণ হলো, দেশীয় খাদ্য ও ত্রাণের রাজনীতি। বাংলাদেশ রাষ্ট্র তখন ছিল খুবই দুর্বল। সরকার ছিল দেউলিয়া, খাদ্য আনতে পারেনি।

তিনি বলেন, ‘দুর্ভিক্ষের জন্য অনেকেই শেখ মুজিবুর রহমানকে দায়ী করতে চান। নিশ্চিতভাবেই আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে এটাও স্পষ্ট যে, তিনি (মুজিব) চেষ্টা করেছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ভিক্ষার জন্য গিয়েছিলেন। ...তখন দেশে যে খাদ্য ছিল, তার বেশিরভাগই শহুরে মধ্যবিত্তদের কাছে রেশন আকারে দেওয়া হয়েছিল। গরিবদের দেওয়া হয়নি।’

নাওমি হোসাইন বলেন, ‘চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের সময় বাসন্তীর যে ছবিটি (আলোকচিত্র) ব্যাপক প্রচার পেয়েছিল, সেই ছবি আসলে স্টেজড (সাজানো) ছিল। তবে বাসন্তীদের আসল অবস্থা তখন ওই ছবির মতোই ছিল।’

তিনি মনে করেন, ‘শিল্পকর্ম ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের বিষয়টি খুব কমই এসেছে।’ এ দুর্ভিক্ষ নিয়ে অধ্যয়ন করতে তরুণ প্রজন্মসহ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই দুর্ভিক্ষ যারা দেখেছেন, তাদের গল্প শুনতে হবে, সেই তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। দুর্ভিক্ষের ভেতর দিয়ে যারা গেছেন, তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে ওরাল হিস্ট্রি (কথ্য ইতিহাস) লেখা সম্ভব।’

অধ্যাপক নাওমি বলেন, ‘অতীতে কেন দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, তা যদি মানুষ না জানে, তাহলে ভবিষ্যতে তার পুনরাবৃত্তি রোধ করার ক্ষেত্রে সঠিক ভূমিকা পালন করা যায় না।’

তিনি বলেন, ‘চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ নিয়ে দ্য এইড ল্যাব: আন্ডারস্ট্যান্ডিং বাংলাদেশস আনএক্সপেক্টেড সাকসেস শিরোনামে তার লেখা বইটির মূল বক্তব্য ও আলোচনা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য বেশ বিব্রতকর ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয় ছিল। আওয়ামী লীগ ভেবেছিল, দুর্ভিক্ষের আলোচনা তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে ‘

নাওমি হোসাইন বলেন, ‘বইটি লেখার ক্ষেত্রে তার কাছে বড় প্রেরণা ছিল তরুণ প্রজন্ম। দুর্ভিক্ষের ইতিহাস তিনি তরুণদের সামনে নিয়ে আসতে চেয়েছেন।’

এইচ.এস/


চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন