ছবি: সংগৃহীত
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই–অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের কৃষিপ্রধান দেশগুলোর ধানে আর্সেনিকের উপস্থিতির আশঙ্কা বেড়ে গেছে। সম্প্রতি দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই–অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধি ধানে আর্সেনিকের পরিমাণে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে ভোক্তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে। এ গবেষণা অনুসারে, দীর্ঘ মেয়াদে অজৈব আর্সেনিকের সংস্পর্শে ফুসফুস, মূত্রাশয় ও ত্বকের ক্যানসার হতে পারে। এ ছাড়া হৃদ্রোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
আর্সেনিক যখন অক্সিজেন বা সালফারের মতো অ-কার্বন উপাদানগুলোর সঙ্গে মিলিত হয়, তখন অজৈব আর্সেনিক যৌগ তৈরি হয়। এটি সামুদ্রিক খাবারে পাওয়া জৈব আর্সেনিক যৌগের চেয়ে অনেক বেশি বিষাক্ত।
নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির মেইলম্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথ ও চায়নিজ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষণা দেখিয়েছে, তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি ও কার্বন ডাই–অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে ধানে অজৈব আর্সেনিকের ঘনত্ব বাড়ে।
গবেষকদের মতে, চাল বিশ্বের অনেক অঞ্চলের প্রধান খাদ্য। এ পরিবর্তন ২০৫০ সালের মধ্যে এশিয়ার জনগণের ক্যানসার, হৃদ্রোগ ও আর্সেনিক সম্পর্কিত অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার প্রকোপ যথেষ্ট বাড়িয়ে দিতে পারে।
মেইলম্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের পরিবেশগত স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ও গবেষণার প্রধান গবেষক লুইস জিস্কা বলেন, দক্ষিণ চীন এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মতো অঞ্চলের চাল এরই মধ্যে আর্সেনিক ও ক্যানসারের ঝুঁকির একটি বড় উৎস।
তিনি বলেন, উচ্চ আর্সেনিকের মাত্রা সম্ভবত মাটিতে রাসায়নিক উপাদানের জলবায়ু-সম্পর্কিত পরিবর্তনের কারণে ঘটে। এতে ধানের দানায় আর্সেনিক সহজে শোষিত হয়।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, বর্তমান নীতি অপরিবর্তিত থাকলে ২১০০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প স্তরের চেয়ে ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি বাড়বে। এটি প্যারিস চুক্তিতে উল্লিখিত ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এ সীমা জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলো প্রশমিত করতে সহায়তা করবে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, ২০২৩ সালে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই–অক্সাইডের পরিমাণ রেকর্ড ৪২০ পার্টস পার মিলিয়নে (পিপিএম) পৌঁছেছে। এটি প্রাক-শিল্প স্তরের চেয়ে দেড়গুণ বেশি এবং গত ৮ লাখ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
গবেষকেরা তাঁদের গবেষণায় ১০ বছর ধরে মাঠে ২৮টি ধানের জাতের ওপর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও কার্বন ডাই–অক্সাইডের প্রভাব পরিমাপ করেছেন। তারা ‘ফ্রি-এয়ার কার্বন ডাই–অক্সাইড এনরিচমেন্ট’ নামক একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন, যেখানে নির্দিষ্ট এলাকায় কার্বন ডাই–অক্সাইডের মাত্রা বাড়ানো হয়েছিল। এ ছাড়া উন্নত মডেলিং কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে।
এ গবেষণা বিজ্ঞানীদের সাতটি এশীয় দেশ—বাংলাদেশ, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের ধানে অজৈব আর্সেনিকের মাত্রা ও ক্যানসারের মতো স্বাস্থ্যঝুঁকি অনুমান করতে সাহায্য করেছে।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন