বুধবার, ২৩শে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৮ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য’ সংহত করতে ৪ দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার জরুরি বৈঠক *** লিটন দাস জয় উৎসর্গ করলেন নিহতদের স্মরণে *** সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতে সিরিজ বাংলাদেশের *** বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের সব দাবি যৌক্তিক বলে মনে করে সরকার *** বিএনপি-জামায়াতসহ চার দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা *** প্রধানমন্ত্রী দলীয় প্রধান হতে পারবেন না—এই দাবির যৌক্তিকতা নেই: সালাহউদ্দিন *** আখের চিনি দিয়ে ‘ট্রাম্প ভার্সন’ বাজারে আনছে কোকা-কোলা *** বিমান বিধ্বস্তে হতাহতদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে সরকার: প্রেস উইং *** ফরিদা পারভীনের শারীরিক অবস্থার উন্নতি, ফিরেছেন বাসায় *** জাকেরের ফিফটিতে পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ

গ্রামবাংলার আদি ঐতিহ্য মাটির ঘর

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৯:২৬ অপরাহ্ন, ৭ই মে ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

গ্রাম বাংলার আদি ঐতিহ্য মাটির ঘর। চারদিক মাটির দেয়াল, উপরে টিন বা ছনের ছাউনি বয়োজ্যেষ্ঠদের মনে করিয়ে দেয় তাদের শৈশব। কনকনে শীতে ঘরের ভেতর উষ্ণ পরিবেশ ও গরমকালে স্বাভাবিক তাপমাত্রা বিরাজ করায় মাটির ঘর গরিবের কাছে যেমন আরামের তেমনি ধনীদের কাছে ছিল বিলাসিতা। তবে যুগের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে অস্তিত্ব বিলীনের পথে মাটির ঘর।

কালের বিবর্তনে এসব মাটির ঘর এখন বিলুপ্ত প্রায়। জানা যায়, মাটির সহজলভ্যতা, প্রয়োজনীয় উপকরণের প্রতুলতা আর শ্রমিক খরচ কম হওয়ায় আগের দিনে মানুষ মাটির ঘর বানাতে আগ্রহী ছিল। এ ছাড়া টিনের ঘরের তুলনায় মাটির ঘর অনেক বেশি আরামদায়ক। তীব্র শীতে ঘরের ভেতরটা থাকে বেশ উষ্ণ। আবার প্রচণ্ড গরমেও ঘরের ভেতর থাকে তুলনামূলক শীতল। এ জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় মাটির ঘরের আধিক্য ছিল বেশি।

এক সময় মফস্বলের প্রতিটি বাড়িতেই দেখা যেত এই মাটির ঘর। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে পূর্ব-পুরুষের তৈরি ঘরগুলো এখন ইট, বালু, রড, সিমেন্টের ঘরে রূপান্তরিত হচ্ছে। আর যাদের সামর্থ্য নেই তারা করছেন টিনের ঘর। 

যারা মাটির ঘর নির্মাণ করেন তারা ‘দেয়ালি’ নামে পরিচিত। সচরাচর এঁটেল মাটি দিয়ে এসব ঘর তৈরি করা হয়। পরিচ্ছন্ন মাটির সঙ্গে পানি মিশিয়ে কাদায় পরিণত করে ইটের মতো সারি সারি করে ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া দেয়াল তৈরি করা হয়। প্রতিবারে এক থেকে দেড় ফুট উঁচু করে ক্রমে শুকিয়ে গেলে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড়, টালি বা টিনের ছাউনি দেয়া হতো। মাটির ঘর অনেক সময় দোতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত করা হতো। প্রতিটি ঘর তৈরিতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগে। গৃহিণীরা মাটির দেয়ালে বিভিন্ন রকমের আল্পনা এঁকে তাদের নিজ বসতঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তুলতেন। বন্যা বা ভূমিকম্প না হলে এসব ঘর শতাধিক বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। তবে মুষলধারে বৃষ্টিতে মাটির ঘরের স্বাভাবিক কাঠামো নষ্ট হওয়ায় লোকজন এই ঘর তৈরিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

পূর্ব-পুরুষের স্মৃতি হিসেবে এখনো বেশ কিছু জায়গায় মাটির ঘর দেখা যায়। রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের পাচাইখাঁ এলাকায় এখনো কিছু মাটির ঘর রয়েছে। গাজীপুর এবং জয়পুরহাটের কিছু কিছু এলাকাতেও এখনো মাটির ঘর দেখতে পাওয়া যায়। একচালা ঘরগুলোর চারদিক দেয়াল উপরে টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি ঘরগুলো দেখতে ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতোই সুন্দর। নওগাঁয় রয়েছে ১০৮ কক্ষের মাটির প্রাসাদ।

আরো পড়ুন: লাল রঙের কাপড়েই কেন লেপ সেলাই করা হয়?

আধুনিকতার ছোঁয়ায় শিল্পায়নের প্রভাবে এখন বড় বড় দালানকোঠা মাটির ঘরের স্থান দখল করে নিয়েছে। এই পরিবর্তনের ধারাটা শুরু হয় মূলত গ্রাম অঞ্চলের মানুষ যখন থেকে বিদেশে গমন করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে শুরু করেছে ঠিক তখন থেকে। আমরা প্রথম প্রথম দেখেছি কেউ একজন বিদেশ গেলে অর্থ উপার্জন করে তার প্রথম কাজ ছিল একটা পাকা ঘর তৈরি করা। আর এখন জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচার জন্যই মানুষ ধীরে ধীরে টেকসই আবাসস্থল তৈরি করছে। গত কয়েক যুগ আগে এঁটেল মাটি দিয়ে যে ঘর বানানো হতো তা আমাদের বর্তমান নতুন প্রজন্ম জানে না। তাদেরকে বুঝানোর জন্য এই মাটির ঘরকে জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ করে রাখা উচিত।

এসি/ আই.কে.জে/


গ্রামবাংলা মাটির ঘর

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন