গরুর গাড়ি ও পালকি নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে যুবকের বিয়ে। ছবি: সংগৃহীত
আধুনিকতার রঙিন ঝলকানির ভিড়ে যখন বিয়ের বাহন হিসেবে হেলিকপ্টার বা বিলাসবহুল গাড়িই মুখ্য হয়ে উঠেছে, তখন ঠাকুরগাঁওয়ের এক তরুণ আয়োজন করলেন একেবারে ভিন্ন কিছু। গ্ল্যামারের ছায়া পেরিয়ে ফিরে গেলেন অতীতের সেই দিনগুলোতে—যখন পালকি আর গরুর গাড়ি ছিল বিয়ের অন্যতম অনুষঙ্গ। শুক্রবার (২৭শে জুন) এ বিয়ের আয়োজন হয়।
হরিপুর উপজেলার খাকড়তলা গ্রামের আনিসুজ্জামান শুভর এমন আয়োজনে মিশে আছে আবেগ, স্মৃতি আর শিকড়ের টান। প্রয়াত বাবা শফিকুর রহমানের শেষ ইচ্ছা ছিল—ছেলের বিয়ে হোক পুরোনো দিনের স্টাইলে। সেই ইচ্ছাপূরণে শুভ বেছে নিলেন পালকি আর ঘোড়ার গাড়ি। বরযাত্রায় যোগ দিল ১২টি গরু-মহিষের গাড়ি। বরযাত্রীদের গন্তব্য ছিল যাদুরানীর শাহাবুদ্দিনের মেয়ে রিপার বাড়ি।
এ ব্যতিক্রমী দৃশ্য দেখতে ভিড় জমায় আশপাশের গ্রামের শত শত মানুষ। কেউ কেউ মোবাইল ফোনে বন্দী করেন দৃশ্য, কেউ আবার আবেগভরে বলেন, ‘এই তো আমাদের ছেলেবেলা! এমন বিয়ে তো ৪০ বছর আগে হতো।’
শুভর মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘স্বামীর শেষ ইচ্ছাই ছিল এমন এক বিয়ের আয়োজন। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই এমন আয়োজন করেছি।’
বিয়ের দিনে শুধু বাহনেই চমক নয়, ছিল হৃদয়ের উষ্ণতাও। বউভাতের আয়োজনে আমন্ত্রিত হাজারখানেক মানুষ। কেউ নিয়ে আসেননি কোনো উপহার, খাম কিংবা গিফট প্যাকেট। তবু অতিথিদের আপ্যায়নে ছিল না কোনো কমতি।
আনিসুজ্জামান শুভর এ উদ্যোগ যেন একবারে নিছক বিয়ে নয়, বরং বাংলার হারিয়ে যেতে বসা ঐতিহ্যকে ফিরে পাওয়ার একটি প্রতীক। প্রযুক্তিনির্ভর যুগেও শিকড়কে আঁকড়ে ধরার এ চেষ্টাই বলে দেয়—বাঙালির সংস্কৃতি এখনো বেঁচে আছে, বুকভরে নিশ্বাস নিতে জানে।