সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাবা, কোটি কোটি শুকরিয়া যে তোমার মেয়ে হয়ে জন্মেছি

সাহিত্য ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:৫৩ অপরাহ্ন, ১০ই অক্টোবর ২০২৩

#

আব্বু, 

কেমন আছো তুমি? নিশ্চয়ই খুব একটা ভালো না। ভালো না থাকার কারণগুলোও আমি জানি। তবুও আমি প্রার্থনা করি যেন তুমি সব সময় ভালো থাকো, সুস্থ থাকো, হেফাজতে থাকো। আল্লাহ্ যেন আমার সকল আয়ু তোমায় দান করে। সকল বালা-মুসিবত থেকে যেন তোমায় রক্ষা করে। ফি আমানিল্লাহ্।

আব্বু জানো, আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি? ভীষণ ভীষণ! ভীষণ ভালোবাসি তোমায়। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারি না। সোনার চামচ নিয়ে জন্মগ্রহণ না করলেও তুমি আমাকে আর আমার এই পরিবারটাকে সোনায় মুড়িয়ে রেখেছো। ছেলে মানুষেরা যে এতোটা নিঃস্বার্থভাবে তার পরিবার-প্রিয়জনের সব দেখ-ভালের দায়িত্ব নিতে পারে তা তোমায় না দেখলে হয়তো বুঝতাম না বাবা! মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্মগ্রহণ করেও অভাব কী জিনিস তুমি তা বুঝতে দাও না। কেন? আব্বু কেন? তুমি এমন কেন! 

যেদিন তোমার হাত ধরে নিজের শহর ছেড়ে এই অচেনা শহরে চলে এলাম, সেদিন খুব কেঁদেছিলাম। এমনকি আজও সেই কান্না থামেনি। কারণ, তোমার মতো নির্ভীক, নিরাপদ সেই আশ্রয়টা আজ আমার কাছে নেই। 

বটগাছের মতো আল্লাহর রহমত নিয়ে পুরো পরিবারটাকে তুমি যেভাবে আগলে রেখেছো, আজ অবধি কোনো ছেলে মানুষকে আমি এমন হতে দেখিনি। এতো দায়িত্ববান মানুষ সত্যিই আমি দেখিনি। 

আব্বু, শুনেছি ছেলেদের কান্না নাকি ভীষণ করুণ হয়। কোনো কারণে তুমি যদি কাঁদো তা দেখে কতোটা ক্ষত হয়, তুমি জানো না। আব্বু তোমার হাসি যে কী সুন্দর তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমার ২৩ বছর বয়সে আমি এতো সুন্দর হাসি কখনো কোনো ছেলের মুখে দেখিনি। 

আমাদের মানুষ করার লক্ষ্যে শহরে পাঠিয়েছো। আম্মুকেও আমাদের সাথে রেখেছো যেন কোনো ক্রমেই আমাদের কষ্ট না হয়। অথচ ঘণ্টার পর ঘণ্টা, পথের পর পথ, রোদ বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে পায়ের হাড়গুলোকে ক্ষয় করে, দিন শেষে তিনটা সংসারে যাবতীয় সব খরচ বহন করে যাচ্ছো। তবুও তোমার কোনো ক্লান্তি নেই, রাগ নেই, অভিমান-অভিযোগ কিছুই নেই। শুধু বুক ভরা স্বপ্ন আর মুখে ভালো থাকার অভিনায়ক হাসি দিয়ে আমাদের ভালো রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছো। 

আফসোস একটাই তোমার মতো এতো ভালো বাবা পেয়েও তোমার জন্য কিছু করতে পারছিনা না। তোমার স্বপ্নগুলো পূরণ করতে পারছি না। Sorry Baba, মাফ করে দিও। তোমায় নিয়ে লিখতে গেলে লেখা শেষ হবে না। অপূর্ণ থাকবে চিঠির পর চিঠি। তবে আল্লাহর কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া যে তোমার মেয়ে হয়ে জন্মেছি। ইহকাল ও পরকালে আমি তোমার মেয়ে হয়েই থাকতে চাই আব্বু। 

ভালোবাসি বাবা। ভালো থেকো তুমি। ফি আমানিল্লাহ্।

--- ইতি 

তোমার আদরের    

শাহাজাদী আরজু 


এস/ আই.কে.জে


বাবা মেয়ে

খবরটি শেয়ার করুন