শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীর স্বাস্থ্য

দেশের ৭১ শতাংশ নারী পিরিয়ডকালীন পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অসচেতন

স্বাস্থ্য ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০২:০৩ অপরাহ্ন, ৮ই আগস্ট ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে প্রায় ৫ কোটি ৪০ লাখ নারীর পিরিয়ড হয়। তাদের মধ্যে বড় সংখ্যক হলেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগামী কিশোরী। এর মধ্যে ৭১ শতাংশ নারী এখনো পিরিয়ড চলাকালীন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সচেতন নন। সচেতনতার অভাব এবং সামাজিক নানা ট্যাবুর কারণে তারা এখনো এ বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে ও শুনতে স্বস্তিবোধ করেন না। ফলে নানা রোগসহ গর্ভধারণে তারা নানা জটিলতার সম্মুখীন হন বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে এবং স্যানিটারি ন্যাপকিন সহজলভ্য করতে হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাইজেন সার্ভে-২০১৮ অনুসারে, প্রায় ৫০ শতাংশ কিশোরী স্যানিটারি ন্যাপকিনের পরিবর্তে অস্বাস্থ্যকর পুরোনো কাপড় ব্যবহার করে। পিরিয়ডের সময় দেশের অনেক কিশোরীই স্কুলে যায় না এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে পরীক্ষায়ও অংশ নেয় না। কারণ, দেশের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঋতুকালীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাবান্ধব টয়লেট নেই। টয়লেটগুলোতে জরুরি স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের সুযোগ থাকে না এবং ব্যবহৃত ন্যাপকিন ফেলার জন্যও থাকে না কোনো স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা। অথচ গড়ে একজন শিক্ষার্থী পিরিডের সময় ৭-৮ ঘণ্টা স্কুলে থাকে সেজন্য স্কুলগুলোতে জরুরি স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের সুযোগ এবং তা ফেলার স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা থাকা দরকার।

বাংলাদেশে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ চলছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মাসিক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে। মাসিক নিয়ে যেসব ভুল ধারণা বা কুসংস্কার রয়েছে, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য জানাতে এসব বেসরকারি সংস্থা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। মেয়েদের সঠিক সময়ে মাসিক হওয়া তার শারীরিক ও মানসিকভাবে বেড়ে ওঠার পূর্বশর্ত। তাই মাসিক চলাকালীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানা থাকা তার অধিকার। এ অধিকার আদায়ে আমাদের সবার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে বলে জানান বিজ্ঞজনেরা।

বিবিএস, ইউনিসেফ বাংলাদেশ এবং ওয়াটারএইডের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ ‘ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভের প্রতিবেদনে দেখা গেছে—সচেতনতার অভাব আর দাম নাগালের বাইরে হওয়ায় দেশের ৭১ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নারী এখনো পিরিয়ডের সময় ডিসপোজেবল প্যাড ব্যবহার করেন না। তারা প্যাডের পরিবর্তে পুরোনো আর অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহারে নানা সংক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিরিয়ড সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানা এবং এ সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় পিরিয়ড সংক্রান্ত নানা জটিলতার মুখোমুখি হতে হয় নারীদের। বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচেতনতায় স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি।

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ছয় ঘণ্টা অন্তর ন্যাপকিন পালটানো দরকার, তা না হলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে এবং নানা রোগ দেখা দিতে পারে। এ সময় সুস্থ থাকার জন্য রয়েছে বেশ কিছু করণীয়:

>> মাসিকের সময় পরিষ্কার সুতি কাপড় বা ভালো স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করা (স্যানিটারি প্যাড সবচেয়ে নিরাপদ);

>> প্রতিদিন গোসল করা এবং গোসলের সময় যোনিপথ ও এর চারপাশ ভালভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করা;

>> মাসিকের কাপড় বা প্যাড ভিজে গেলে চার-ছয় ঘণ্টা পরপর বদলানো;

>> কাপড় বা প্যাড বদলানোর পর হাত ভালো করে ধোয়া।

আরো পড়ুন: মেনোপজ পুরুষদেরও হয়! যে সময় এই সমস্যা দেখা দিতে পারে

কাপড় রোদে শুকিয়ে, শুকনো ও পরিষ্কার স্থানে রাখলে পরবর্তী মাসিকের সময় তা ব্যবহার করা যায়। এ সময় বেশি দুর্বলতা কিংবা অন্য কোনো সমস্যা হলে পরিবারের নারী সদস্য বা বিশ্বস্ত প্রিয়জনের সহায়তা নিতে হবে। এ সময় মেয়েদের শরীরে যে ঘাটতি সৃষ্টি হয়, তা পূরণে বেশি করে পুষ্টিকর, আয়রন ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেতে হবে। যেমন: কচুশাক, লাউশাক, পাটশাক, লালশাক, কলা, গুড়, ডিম, কলিজা ও শুঁটকি মাছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং গুড়, ডিম, দুধ, দই, ছোট মাছ ও মুরগির মাংসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে।

এম এইচ ডি/ আই. কে. জে/ 



নারীর স্বাস্থ্য নারীদের পিরিয়ডকালীন পরিচ্ছন্নতা স্যানিটারি ন্যাপকিন কিশোরী ঋতুকালীন স্বাস্থ্য

খবরটি শেয়ার করুন