ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তান আন্দোলন থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন হয়ে ছয় দফা, তারপর মুক্তিযুদ্ধ—বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের প্রতিটি ঘটনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুক্ত ছিলেন। রাজনৈতিক আন্দোলনে ছিলেন। দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে তার অনেক পরিকল্পনা ও চিন্তা ছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তাকে অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হয়। এই সামগ্রিক পরিস্থিতির বিবেচনায় শেখ মুজিবকে দেখতে হবে। এ জন্য তার একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনীগ্রন্থ হওয়া দরকার বলে মনে করেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
২০২২ সালের ১৬ই এপ্রিল রাজধানীতে আয়োজিত শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা একটি বই নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে আলোচকদের প্রশ্ন করা প্রসঙ্গে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন আজকের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল। অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকারের তিনজন উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। পুরো আয়োজন ছিল শেখ মুজিবময়। তবে উপদেষ্টারা ওই অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন না।
দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচকদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলসহ সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ। বাকি দুই উপদেষ্টা বক্তব্য দেননি, আলোচনাও অংশ নেননি।
প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: ফিলোসফি, পলিটিকস অ্যান্ড পলিসিস' বই নিয়ে আয়োজিত ওই আলোচনা অনুষ্ঠানে আসিফ নজরুলসহ অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
২০২৪ সালের ৫ই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে শেখ মুজিবুর রহমান বিষয়ক বইয়ের আলোচনায় তিন উপদেষ্টা আমন্ত্রিত হয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে অংশ নিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ড. কামাল হোসেন, ড. হামিদা হোসেন, খালেদ শামস, তৌহিদ হোসেন, মনজুর আহমেদ, আহরার আহমেদ, পংকজ ভট্টাচার্য্য, ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, আবুল খায়ের, বদিউল আলম মজুমদার, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ইফতেখারুজ্জামান, মালেকা বেগম, শাহীন আনাম, লুভা নাহিদ চৌধুরী ও নবনীতা চৌধুরী প্রমুখ।
অধ্যাপক রেহমান সোবহান ও অধ্যাপক রওনক জাহানের লেখা এই বই নিয়ে রাজধানীর একটি হোটেলে প্রথমা প্রকাশন আলোচনা অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বইয়ের দুজন লেখক ছাড়াও শেখ মুজিবুর রহমানের কয়েকজন সহকর্মী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: ফিলোসফি, পলিটিকস অ্যান্ড পলিসিস বইটিতে শেখ মুজিবের দর্শন, রাজনীতি ও নীতি প্রণয়নের রূপরেখা আলোচিত হয়েছে। লেখকেরা মুজিবের নিজের লেখা থেকে নির্বাচিত অংশ এবং তার সঙ্গে নিজেদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে বইটি লিখেছেন।
বইটি নিয়ে আলোচনাকালে রেহমান সোবহান পাকিস্তান আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতাযুদ্ধের আগপর্যন্ত কোন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন, তা তুলে ধরেন।
রক্তাক্ত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীনতার আগে ব্যাংক থেকে শুরু করে বিমা, ব্যবসা, বাণিজ্য, কোম্পানি, এমনকি বায়তুল মোকাররমের বড় দোকানগুলো অবাঙালি পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে ছিল। তারা এসব ছেড়ে চলে যাওয়ার পর অর্থনীতিতে একটি শূন্যতা তৈরি হয়। তখন জাসদের মতো রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা রাখে। এ পরিস্থিতিতে শেখ মুজিব দেশ নিয়ে তার পরিকল্পনাগুলোর সবটা বাস্তবায়ন করতে পারছিলেন না।
রেহমান সোবহান বলেন, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের এই ফারাকের কারণে অনেকে মুজিবকে অনেকভাবে ব্যাখ্যা করে। কিন্তু তাকে ওই বিশেষ পরিস্থিতির আলোকে বিবেচনা করতে হবে।
রওনক জাহান বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে। কিন্তু কোনো বইতে আমরা তাকে পূর্ণাঙ্গভাবে উপস্থাপন করতে দেখি না। তাই তার সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের তার আত্মজীবনীমূলক তিনটি বইয়ের ওপরই ভরসা করতে হয়।’
রওনক জাহান উল্লেখ করেন, তিনি রেহমান সোবহানের মতো শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেননি। তবে তার একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর লেখা তিনটি বইয়ের মধ্যে শোষণ ও বঞ্চনার বিষয়টিগুলো বারে বারে আসতে দেখি। কিন্তু এখন আমরা দেশের বিভিন্ন স্তরের আলোচনায় শুধু উন্নয়ন নিয়ে কথা বলতে দেখি।’
মুজিবুর রহমানকে জাতীয়তাবাদী হিসেবে উল্লেখ করে রওনক জাহান বলেন, তিনি স্বাধীনতার কথা বলতে গিয়ে মুক্তির কথা বলেছেন। বাক্স্বাধীনতার কথা বলেছেন। গণতন্ত্র আর নির্বাচনের কথা বলেছেন।
খবরটি শেয়ার করুন