ছবি: সংগৃহীত
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলা আর ১৯৭৩ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রার কাভারেজ পাওয়া সেই নুরা পাগলা কি একই মানুষ? এ নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এরই মধ্যে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনোয়ার পারভেজ হালিম দাবি করেছেন, হাইকোর্টের সেই ‘নুরু পাগলা আর আর গোয়ালন্দের নুরাল পাগলা এক ব্যক্তি নয়।
শনিবার (৬ই সেপ্টেম্বর) রাতে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা জানা জানান।
পোস্টে তিনি লেখেন, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার মাজারে হামলা, কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে ফেলার পর অনেকেই দেখছি বিচিত্রার একটি পুরোনো প্রচ্ছদ পোস্ট করেছেন। বিচিত্রা নুরা পাগলা ও পপ গায়ক আজম খানকে নিয়ে ১৯৭৩ সালে একটি কাভার স্টোরি করেছিল। পোস্টদাতাদের দাবি, বিচিত্রার সেই নুরা পাগলা আর গোয়ালন্দের নুরাল পাগলা একই ব্যক্তি। তাদের এই দাবি সঠিক নয়, মিথ্যা।
আনোয়ার পারভেজ আরও লেখেন, বিচিত্রার নুরা পাগলা ছিলেন শিক্ষিত। মুক্তিযোদ্ধা। তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। যুদ্ধফেরত নুরা মাজারে মাজারে ঘুরে বেড়াতেন। জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে হাইকোর্টের মাজারে। আধ্যাত্মিক গান করতেন। সেইসূত্রে তার সঙ্গে আজম খানের সাক্ষাৎ হয়।
নুরা পাগলাকে নিয়ে আজম খানের একটি বিখ্যাত গান আছে, ‘হাইকোর্টের মাজারে কত ফকির ঘোরে/ আসল আর কয়জন ফকির/প্রেমের বাজারে কত প্রেমিক ঘোরে।’
আনোয়ার পারভেজ হালিম জানান, ২০০৮ সালের দিকে সর্বশেষ জেনেছিলাম, নুরা পাগলা অসুস্থ। গুলশানের শাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সম্ভবত ওই সময়ে বা তার কিছু পরে তিনি মারা যান। তাকে নিয়ে অনেক মিথ আছে। আবারও বলি, নুরা পাগলা আর নুরাল পাগলা এক ব্যক্তি না।
শুধু সাংবাদিক আনোয়ার পারভেজ হালিমেই নন, আরও অনেকেই বলছেন তারা দুজন একই মানুষ নন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধফেরত নুরা পাগলাকে সত্তরের দশকে ঢাকার হাইকোর্ট মাজারের আশেপাশে প্রায়ই দেখা যেত। ওই সময় তার বয়স ছিল আনুমানিক ৪০ থেকে ৪৫ এর মধ্যে। তাহলে ২০২৫ সালে তার বয়স হতো প্রায় শত বছরের কাছাকাছি। গোয়ালন্দের নুরাল পাগলার বয়স ৮৪ বছর। তাদের চেহারাতে সাদৃশ্য খুবই কম।
উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালের ১০ই আগস্ট সাপ্তাহিক বিচিত্রার কভার স্টোরিতে নুরা পাগলাকে বলা হয়েছিল পপসম্রাট আজম খানের আধ্যাত্মিক প্রেরণা। কলেজ পর্যন্ত পড়াশোনা করা নুরা পাগলার ছিল নিজস্ব দর্শন। শোনা যায়, তিনি প্রায়ই বলতেন, প্রতিটি মানুষের আত্মায় আল্লার অবস্থান। তিনি এই ভুবনেই অবস্থান করছেন। নুরা পাগলার এই আধ্যাত্মিক দর্শণ নিয়েই প্রয়াত পপসম্রাট আজম খান লিখেছেন ও গেয়েছেন-
‘আমি যারে চাই রে, সে থাকে মোরই অন্তরে/ আমি তারে পেয়েও হারাই রে/ এই আছে এই নাই/ অন্তরে নিয়েছে ঠাঁই/ বিরাজ করে সে এ ভুবনে/ ভক্তিতে মুক্তি জানি এ সত্যি/ বাসনা পপ খান এক ব্যক্তি না।'
খবরটি শেয়ার করুন