ছবি: সংগৃহীত
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর একে একে জামিনে বের হয়ে আসেন শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। দীর্ঘদিন বিদেশে পলাতক আন্ডার-ওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীরা দেশে তৎপরতা বাড়িয়ে দেন। এতে অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। আন্ডার-ওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করা এসব সন্ত্রাসী তাদের সহযোগী দিয়ে একের পর এক অপরাধ সংঘটিত করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
অনেক ক্ষেত্রে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটিয়ে নিজেদের ক্ষমতা দেখাচ্ছেন তারা। আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে একে অপরের বিরুদ্ধে খুনোখুনিতেও জড়াচ্ছেন। ফলে রাজধানী ঢাকার আন্ডার-ওয়ার্ল্ড দীর্ঘদিন পর আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
যারা জামিন নিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছেন, তারা নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠে-পড়ে লেগেছেন। কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও মাঠ দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নিজেদের অপরাধ সাম্রাজ্য ধরে রাখতে তারা নতুন নতুন অপরাধ করছেন। এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসার ভাগ-দখল ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে খুনখারাবির মতো মারাত্মক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরেক শ্রেণি চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপরাধ করছে। কখনো কখনো পাড়া-মহল্লায় চলে সশস্ত্র মহড়া। এসব ঘটনা প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে। এতে জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে শুধু রাজধানীতে খুন হয়েছেন ১৩৬ জন। সারাদেশে এ সংখ্যা ১ হাজার ২৪৪ জন। যা বিগত বছরগুলোর একই সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। ২০২১ সালের প্রথম চার মাসে ঢাকায় এ সংখ্যা ছিল ৫৫ জন, ২০২২ সালে ৫৪ জন, ২০২৩ সালে ৫১ জন এবং ২০২৪ সালে ছিল ৪৭ জন।
রাজধানীতে যেভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, সেটা সামাল দিতে না পারলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশংকা রয়েছে। বর্তমানে বেশ কিছু কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবস্থা হয়েছে।
পুলিশকে অবমূল্যায়ন, মব ভায়োলেন্স, পুলিশকে কাজ করতে না দেওয়া, পুলিশের প্রতি এক ধরনের আস্থাহীনতা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে অপরাধীরা অপরাধ সংগঠিত করার একপ্রকার ফাঁকা মাঠ পেয়ে যাচ্ছেন। যার কারণে অপরাধের মাত্রা বেশি দেখা যাচ্ছে।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ফ্রিডম রাসু, সুইডেন আসলাম, ফ্রিডম সোহেল, হাবিবুর রহমান তাজ, কিলার আব্বাস, পিচ্চি হেলাল, সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন, শাহাদাত হোসেন, মুক্তার, খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন, মুসা শিকদার, সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ সহদুর্ধর্ষ ২৭ জন মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী কারাগারে জামিনে বেরিয়ে আসেন।
সম্প্রতি পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ গ্রেপ্তার হলেও অনেকে এখনো অধরা রয়েছেন। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিজেদের মধ্যে হানাহানিতেও অনেক খুনের ঘটনা ঘটছে।
শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কারামুক্তির পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারিতে থাকার কথা ছিল। বাস্তবে তা হয়নি। তাদের লাগাম এখনই টানতে হবে, না হলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন