ছবি: সংগৃহীত
নিরাপদ পানি পাওয়া জনগণের মৌলিক অধিকার। আগে বলা হতো, পানির অন্য নাম জীবন। এখন সময় বদলেছে, বলা হয় - সুপেয় পানির অন্য নাম জীবন। রাজধানী ঢাকায় সুপেয় পানির খুব সংকট দেখা যায়। ঢাকায় পানি সরবরাহ করে ওয়াসা। সংস্থাটির সরবরাহ করা পানির মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন রয়েছে।
ওয়াসার পানিতে ময়লা, তীব্র দুর্গন্ধ, এমনকি পোকামাকড়ও পাওয়া যায়। অনেক সময় এ পানি পান করা তো দূরের কথা, রান্নাসহ অন্যান্য কাজেরও অযোগ্য হয়ে পড়ে।
ঢাকা ওয়াসা পানি সরবরাহ দুইভাবে করে থাকে। গভীর নলকূপ থেকে ও নদীর পানি দূষণমুক্ত করে সরবরাহ করে। উত্তোলনকৃত স্থান থেকে সরবরাহকৃত স্থানে পানির পাইপে কোনো ছিদ্র না থাকলে গভীর নলকূপের পানিতে সাধারণত কোনো দূষণ থাকে না। পরিশোধিত পানিতে অক্সিজেন দিয়ে সুপেয় করার চেষ্টা করা হয়।
পাশাপাশি কিছু কেমিক্যালযুক্ত করে জীবাণুমক্ত করা হয়। ট্রিটমেন্ট প্লান্টের সক্ষমতার চেয়ে পানিতে যদি দূষণের মাত্রা বেশি হয়, তবে তাতে দুর্গন্ধ থেকে যায়।
রাজধানীর বস্তি এলাকা বা নিম্ন আয়ের মানুষরা প্রতিনিয়ত থাকেন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে। যাদের বিকল্প উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। তাদের অনেকের মধ্যে ডায়রিয়া, চর্মরোগ, লিভার ও কিডনিজনিত জটিলতা দেখা দেয়।
তবে ওয়াসা এ দায় অস্বীকার করে বলছে, ঢাকায় প্রতিদিন ২৮৫ থেকে ২৯০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হয়, যার মধ্যে সামান্য কিছু এলাকা থেকে অভিযোগ এসেছে। অধিকাংশ বাড়ির ওয়াটার রিজার্ভার নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।
সংস্থাটির দাবি, সরবরাহ করা লাইনের পানিতে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। পরিশোধিত পানিতে ক্লোরিন মেশানো থাকায় পোকা থাকার সুযোগ নেই। তবে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, ঢাকার অনেক জায়গায় ওয়াসার লাইনে লিকেজ রয়েছে। যেখানে এ সমস্যা ঘটতে পারে। তাছাড়া অবৈধ সংযোগের কারণেও পানিতে সমস্যা হতে পারে।
সম্প্রতি ঢাকা ওয়াসা এ বিষয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেখানে গ্রাহকদের তাদের আন্ডারগ্রাউন্ড ও ওভারহেড রিজার্ভার নিয়মিত পরিষ্কার রাখার অনুরোধ জানানো হয়। ওয়াসা জানিয়েছে, তাদের সরবরাহকৃত পানিতে কোনো পোকার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি এবং ল্যাবে পরীক্ষায় কোনো জীবাণু মেলেনি।
ওয়াসা ৭৪ ভাগ পানি গভীর নলকূপ থেকে ও ৩৬ ভাগ নদ-নদীর পানি পরিশোধন করে সরবরাহ করে এবং সরবরাহ নেটওয়ার্কে পর্যাপ্ত ক্লোরিন থাকে। পানিসংক্রান্ত যে কোনো অভিযোগে ১৬১৬২ নম্বরে কল করতে বলা হয়েছে গণবিজ্ঞপ্তিতে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নগরবাসী ওয়াসার পানি খাবারসহ নৈমিত্তিক কাজকর্মে ব্যবহার করে। ময়লা ও পোকামাকড় যুক্ত হলে এ পানি মানুষের পানের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
উত্তোলন ও পরিশোধন থেকে শুরু করে খাবার টেবিলে সুপেয় পানি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ওয়াসার। কিন্তু ওয়াসার অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকাবাসী সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মানুষের জীবন বাঁচাতে সুপেয় পানি সরবরাহ করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন