বুধবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৬ই বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** দীর্ঘ সময় ক্ষুধার্ত থাকলে আয়ু বাড়ে, আমেরিকার গবেষকদের দাবি *** ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে অভিযানের পূর্ণ স্বাধীনতা দিলেন মোদি *** খালেদা জিয়াকে দেশে আনতে প্রস্তুত হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স *** সরকার দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম বন্ধ করেনি: মাহফুজ আলম *** মডেল মেঘনা আলম কারামুক্ত *** ২০২৭ সালের জুনের পর ‘করছাড়’ থাকবে না *** ‘বিএসসিপিএলসি আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইডথ পরিবহনে মাইলফলক অতিক্রম করেছে’ *** ‘পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের মতো গাজাও ফিলিস্তিনের অংশ’ *** ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে এখনো আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব *** আগামীকাল শেষ হচ্ছে মেঘনায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০২:৩২ অপরাহ্ন, ১৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫

#

ছবি - সংগৃহীত

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিভিন্ন দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চলছে। দেশে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। নতুন সরকারের কাছের লোক হওয়ার প্রতিযোগিতায় একদল মাঠে নেমেছে। যে কারণে সর্বত্র এক ধরনের বিশৃঙ্খলার পরিবেশ বিরাজ করছে। ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বরং লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় নাভিশ্বাস উঠেছে। এর কারণ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সিন্ডিকেট এখনো ভাঙা যায়নি। সিন্ডিকেট আগের চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে বেশি শক্তিশালী দেখা যাচ্ছে।

অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উচ্চ মূল্যস্ফীতি। বিশেষ করে নিত্যপণ্যের মূল্য অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়া। সীমিত ও নিম্নআয়ের মানুষ জীবন চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অসংখ্য শ্রমজীবী মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। দ্রব্যমূল্য ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়। এই দুই খাতে বড় কোনো অগ্রগতি নেই। ডলারের দাম বাড়তি। উচ্চমূল্যে ডলার কিনে আমদানি ও অন্যান্য বৈদেশিক দায় মেটাতে হচ্ছে। ফলে রিজার্ভের মজুত থেকে বেশি ডলার খরচ হচ্ছে। যার কারণে গত এক বছরে এক হাজার কোটি ডলারের বেশি রিজার্ভ কমে গেছে।

ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাই এখন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই চ্যালেঞ্জ দুই রকম। এক, সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য সচল করা। দুই, অর্থনীতিতে বিরাজমান সংকটসমূহের সমাধান করা। বর্তমানে অর্থনীতির প্রায় সব সূচক নিম্নগামী। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্ষয়িষ্ণু রিজার্ভ, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে ধীরগতি, ঋণের দায়দেনা, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কমে যাওয়া, এমন অনেক সূচক অর্থনীতিকে বিপদগ্রস্ত করেছে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না, নতুন করে বিনিয়োগেও কেউ আগ্রহী হচ্ছে না। বড় ব্যবসায়ীরা মুদ্রা বাজার, আমদানি, রপ্তানি, এলসি জটিলতায় ভুগছেন। অন্যদিকে ছোট ব্যবসায়ীরা গ্যাস-বিদ্যুৎ,ভ্যাট-ট্যাক্সের সমস্যায় আছেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, দেশে ২৫ লাখের বেশি খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ী আছেন। তাদের অধিকাংশই লোকসানে পড়েছেন। তাদের হিসাবে, গত ১২ মাসের মধ্যে ৭ মাসই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। গত বছরের আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উঠেছিল, যা ছিল অর্থবছরে সর্বোচ্চ। সদ্যবিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, যা অর্থবছর হিসেবে এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ।

পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, দেশি-বিদেশি অনেক নামকরা গ্রুপের অনেক কোম্পানি ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বরে প্রায় শতাধিক কোম্পানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। আরো প্রায়  দেড় শতাধিক কোম্পানি বন্ধের প্রক্রিয়া চলেছে। বন্ধের তালিকায় বড় প্রতিষ্ঠান শুধু নয়, ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি না হলে অর্থনীতিতে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসবে।

ব্যবসা-বাণিজ্য একটি ক্রান্তিকাল পার করছে। মূল্যস্ফীতির চাপে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, বিক্রি হ্রাস, সুদের উচ্চহার, শ্রম অসন্তোষ, পরিবহন ও কারিগরি সমস্যা, ডলার সংকটে কাঁচামালের ঘাটতি, বৈশ্বিক যুদ্ধ ও আকস্মিক বন্যার বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করছেন ব্যবসায়ীরা। তীব্র গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে ভুগছেন। ডিজেল দিয়ে কারখানা চালাচ্ছেন। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছেন না। পরিস্থিতি উত্তরণে এসব সমস্যা সমাধানে সরকারকে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আই.কে.জে/    

ব্যবসা-বাণিজ্য

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন