বুধবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধে অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে কী না, যা বলছেন অর্থনীতিবিদ

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৭:৪৭ অপরাহ্ন, ১১ই এপ্রিল ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

বন্দর ব্যবহার করে অন্য দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা 'আকস্মিকভাবে' বাতিল করার ঘটনাকে 'অস্বাভাবিক' বলে বর্ণনা করছেন কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ। তবে  অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সুখবর ডটকমকে বলেছেন, 'ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় বাংলাদেশের বাণিজ্যে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।'

বাংলাদেশকে ভারত গত কয়েক বছর ধরে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিয়ে আসছিল। গত ৮ই এপ্রিল ভারতের 'সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস' (সিবিআইসি) সেই সুবিধা বাতিল করে।

প্রাথমিকভাবে কেউ কেউ আশঙ্কা করেছিলেন, ভারতের এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ হয়তো বড় কোনো সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন  অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে বলা হচ্ছে, এতে কোনো সমস্যা দেখছে না তারা। অনেক বিশ্লেষকও বলছেন, এ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হলে বাংলাদেশের তেমন কোনো সমস্যা হবে না।

ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত যে আদেশ জারি করেছে, তাতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরে বড় কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলে জানাচ্ছেন অর্থনীতিবিদ-ব্যবসায়ীরাও।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান এ প্রসঙ্গে সুখবর ডটকমকে বলেন, ‘ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের সিদ্ধান্তটা বেশ অপ্রত্যাশিতই বলা চলে। তবে আমরা এ সুবিধা খুব যে বেশি ব্যবহার করতাম, তা নয়। ফলে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধের ফলে আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না ‘

তিনি বলেন, ‘ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানেই বেশি পণ্য রপ্তানি করত বাংলাদেশ। এ দুই দেশে এখন পণ্য রপ্তানিতে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের প্রভাব পড়বে না। ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে ইউরোপ-আমেরিকায় তৈরি পোশাকসহ যেসব পণ্য রপ্তানি হয়, ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের কারণে সেগুলো এখন বন্ধ হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টসের যারা রপ্তানিকারক আছেন, অনেক সময় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্রেতা দেশগুলোর কাছে পণ্য পাঠানোর জন্য তারা ভারতীয় বিমানবন্দর ব্যবহার করতেন। এখন তারা সেটা পারবেন না। ফলে বাংলাদেশ থেকেই সরাসরি পণ্য পাঠাতে হবে।’

মোস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, 'ঢাকার চেয়ে কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহনে খরচ কম। ঢাকা থেকে আকাশপথে কেন খরচ বেশি, তা পর্যালোচনা করতে হবে। কারণ, আকাশপথে পণ্য পরিবহনে ব্যয় সাশ্রয় করা গেলে পোশাক রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। পাশাপাশি পোশাক খাত যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা অব্যাহত রাখা দরকার।'

প্রসঙ্গত, ট্রান্সশিপমেন্ট হলো এমন একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া, যেখানে একটি দেশ তার পণ্য সরাসরি গন্তব্য দেশে না পাঠিয়ে মাঝপথে অন্য একটি দেশের বন্দর ব্যবহার করার মাধ্যমে রপ্তানি করে। একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পণ্য আমদানিও করা হয়।

ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ২০২০ সালের ২৯শে জুন আদেশ জারি করেছিল ভারত।

এইচ.এস/

অর্থনীতিবিদ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন