ছবি: সংগৃহীত
পুরুষদের জন্য নতুন এক জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এটিতে কোনো হরমোন নেই। আরও সহজ করে বললে, এ ওষুধ সেবনের পর পুরুষের হরমোনে সেই অর্থে কোনো পরিবর্তন আসবে না। এর নাম ওয়াইসিটি-৫২৯। ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে। বিজ্ঞান বিষয়ক সংবাদমাধ্যম সায়েন্স অ্যালার্টের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞানীরা এরই মধ্যে ওষুধটি ইঁদুর ও বানরের ওপর পরীক্ষা করে খুব ভালো ফলাফল পেয়েছেন। ওষুধটি শুক্রাণু তৈরি হওয়া কমিয়ে দিলেও, শরীরের ওপর এর তেমন কোনো খারাপ প্রভাব দেখা যায়নি। নেচার কমিউনিকেশন জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধ অনুসারে, পুরুষ ইঁদুরদের এ ওষুধ দেওয়ার এক মাসের মধ্যে এটি কাজ শুরু করে। ওষুধ দেওয়ার পর সেগুলোর সঙ্গীদের গর্ভধারণের হার প্রায় ১০০ শতাংশ কমে যায়। পুরুষ বানরদের ক্ষেত্রে অবশ্য ওষুধের পরিমাণ বাড়াতে হয়েছে। তবে বানরের ক্ষেত্রেও শুক্রাণুর সংখ্যা দ্রুত কমে যায়, কোনো বড় সমস্যা ছাড়াই।
ভালো খবর হলো, ওষুধটি বন্ধ করার পর প্রাণীরা আবার বাচ্চা জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা ফিরে পায়। ওষুধটি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোনের (টেস্টোস্টেরন, এফএসএইচ, ইনহিবিন-বি) মাত্রায় কোনো পরিবর্তন করে না। এ হরমোনগুলো শুক্রাণু তৈরির জন্য প্রয়োজনীয়।
মেয়েদের হরমোনভিত্তিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের কিছু খারাপ দিক আছে। যেমন—ওজন বেড়ে যাওয়া, মন খারাপ থাকা বা ব্যাড কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া। আগে এমন সমস্যার কারণে কিছু ভালো ওষুধের ব্যবহারও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তাই বিজ্ঞানীরা এখন হরমোন ছাড়া অন্য পদ্ধতি খুঁজছেন। এ পদ্ধতিতে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
ওয়াইসিটি-৫২৯ এর প্রথম ধাপের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। যদিও এর চূড়ান্ত ফলাফল এখনো জানা যায়নি, তবে এটি সফল ছিল। তাই এখন দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এ ধাপে দেখা হবে ওষুধটি কতটা নিরাপদ ও কার্যকর। নিউজিল্যান্ডে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এ পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
আমেরিকার মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী গুন্ডা জর্জ বলেন, ‘পুরুষদের জন্য নিরাপদ ও ভালো পিল তৈরি হলে দম্পতিদের জন্য গর্ভনিরোধের আরও সুযোগ তৈরি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনার দায়িত্ব সবাই মিলে নিতে পারবে এবং পুরুষরাও নিজেদের প্রজনন ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।’
অধ্যাপক জর্জের ল্যাব বেশ কয়েক বছর আগে ওয়াইসিটি-৫২৯ নিয়ে গবেষণা শুরু করে। তারা দেখেছে, এটি রেটিনোইক অ্যাসিড রিসেপ্টর (আরএআর) আলফা নামের একটি প্রোটিনের ওপর কাজ করে। রিসেপ্টরটি ভিটামিন-এ থেকে তৈরি হওয়া রেটিনোইক অ্যাসিডের সঙ্গে মিশে কোষের বৃদ্ধি, শুক্রাণু তৈরি ও ভ্রূণের বিকাশে সাহায্য করে।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন