ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৫তম জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৪০ সালের ২৮শে জুন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দেড় দশক ধরে তার জন্মদিনকে বৈশ্বিকভাবে উদযাপন করা হয় ‘সামাজিক ব্যবসা দিবস’ হিসেবে। খবর বাসসের।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে জানিয়েছেন, ড. ইউনূসের জন্মদিন উপলক্ষে সরকারি কোনো কর্মসূচি নেই। এ ছাড়া সরকারি পর্যায়ে জন্মদিন পালন করা হবে না।
গতকাল শুক্রবার (২৭শে জুন) ঢাকার সাভারের জিরাবো সামাজিক কনভেনশন সেন্টারে দু’দিনের ‘সোশ্যাল বিজনেস ডে’র উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ড. ইউনূস। তবে অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার জন্মদিনের উদ্যাপন সংক্রান্ত কোনো আয়োজন ছিল না।
অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী। দারিদ্র্য দূরীকরণে জামানতবিহীন ক্ষুদ্র ঋণের ব্যাংকিং তাকে দুনিয়াজুড়ে খ্যাতি এনে দিয়েছে। তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকও নোবেল জয়ী।যদিও ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরানো হয়। আওয়ামী লীগের শাসনামলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (বর্তমানে ক্ষমতাচ্যুত) তির্যক সমালোচনা এবং মামলায় জর্জরিত ছিলেন অধ্যাপক ইউনূস। তাকে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার শ্রম আদালত।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের অনুরোধে ৮ই আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ইউনূস। ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা, বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কাজ করছে তার সরকার। সংবিধান, নির্বাচন, পুলিশ, বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসনসহ নানা খাতে সংস্কারের চেষ্টা করছে।
অধ্যাপক ইউনূসের পিতা দুলা মিঞা সওদাগর ও মাতার নাম সুফিয়া খাতুন। তাঁর সহধর্মিণী অধ্যাপক ড. আফরোজী ইউনূস। ড. ইউনূসের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।
মুহাম্মদ ইউনূস পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের কলিজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ৩৯ হাজার ছাত্রের মধ্যে ১৬তম স্থান লাভ করেন। উচ্চ মাধ্যমিকে চট্টগ্রাম কলেজে পড়াশোনা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক শেষ করার পর ১৯৬১ সালে চট্টগ্রাম কলেজের অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন ড. ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস ১৯৬৫ সালে আমেরিকায় পড়াশোনার জন্য ফুলব্রাইট স্কলারশিপ লাভ করেন। ১৯৭১ সালে ভান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম ইন ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। পরবর্তীতে আমেরিকার মার্সিসবোরোতে মিডিল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি আমেরিকায় একটি নাগরিক কমিটি গঠন করেন এবং অন্যান্য বাংলাদেশিদের সঙ্গে আমেরিকায় মুক্তিযুদ্ধের জন্য সমর্থন সংগ্রহ করতে ‘বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার’ পরিচালনা করেন।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের সময় ড. ইউনূস দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন। সেই সময় তিনি গ্রামীণ অর্থনৈতিক প্রকল্প চালু করেন। ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী জোবরা গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প চালু হয়। ১৯৮৩ সালে এই প্রকল্পটি ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ হিসেবে রূপান্তরিত হয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামে এর কার্যক্রম বিস্তৃত। বাংলাদেশের বাইরেও আমেরিকাসহ গ্রামীণ ব্যাংক পদ্ধতি (রেপ্লিকেট) বিশ্বের ৪৪টি দেশে অনুসরণ করা হচ্ছে। গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল বর্তমানে ১৫০টিরও বেশি দেশে বিভিন্ন রূপে বিদ্যমান। ১৯৮৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারসহ দেশি ও বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস।
গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষুদ্রঋণ ও ক্ষুদ্রবিত্ত ধারণার প্রেরণার জন্য ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন ড. ইউনূস। ২০০৯ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং ২০১০ সালে কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেলসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। প্রধান উপদেষ্টার ছবি শেয়ার করে ওই পোস্টে প্রেস সচিব লেখেন, ‘শুভ জন্মদিন, স্যার। আপনার সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য আমার জীবনের এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।’
আরএইচ/
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস সামাজিক ব্যবসা দিবস ২৮শে জুন ড. ইউনূসের জন্মদিন
খবরটি শেয়ার করুন