ছবি: সংগৃহীত
ভারতের লেখিকা বানু মুশতাক ২০২৫ সালের ‘ইন্টারন্যাশনাল বুকার’ পুরস্কার জিতে নিয়েছেন। দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকের বাসিন্দা এ লেখিকা একই সঙ্গে একজন আইনজীবী ও অ্যাক্টিভিস্ট। তার ছোট গল্পের সংকলন ‘হার্ট ল্যাম্প’এর জন্য এ বছরের পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। খবর বিবিসির।
কন্নড় ভাষায় লেখা তার এ ছোট গল্পের সংকলনটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন দীপা ভাস্তি। প্রায় তিন দশক ধরে লেখা ১২টি ছোট গল্পের সংকলন এ পুরস্কারপ্রাপ্ত বইটি। দক্ষিণ ভারতের মুসলমান নারীদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা কতটা কঠিন, সেটাই গল্পগুলোর মূল বিষয়।
তার লেখার সঙ্গে মননশীল পাঠকদের পরিচিত থাকলেও ‘ইন্টারন্যাশনাল বুকার’ পুরস্কার তাকে এনে দিল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তিনি কর্নাটকের একটি ছোট শহরের মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় বড় হয়েছেন। অন্য প্রতিবেশীদের মতোই তিনি স্কুলে উর্দুতে কোরআন পড়তে শিখেছিলেন।
তার সরকারি কর্মচারী বাবা চাইতেন, তাকে উচ্চশিক্ষিত করে তুলতে। তাই আট বছর বয়সে বানু মুশতাককে ভর্তি করা হয় কন্নড় মাধ্যম স্কুলে। তার বয়সী অন্য মেয়েদের যখন বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, তারা সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন, তখন তিনি স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হন।
নিজের পছন্দ করা পুরুষকে তিনি ২৬ বছর বয়সে বিয়ে করেন। বিয়ের বছর খানেক পরে তার প্রথম ছোট গল্প ছাপা হয় একটি স্থানীয় পত্রিকায়। ভালোবেসে বিয়ে করলেও শ্বশুরবাড়িতে তাকে বোরখা পড়তে বাধ্য করা হত, ঘরের কাজ করতে বলা হত।
জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে বানু মুশতাক একবার নিজের গায়ে পেট্রল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তার নিজের কথায়, ‘আমার স্বামী কিছু একটা আন্দাজ করে জড়িয়ে ধরেন, দেশলাইয়ের বাক্সটা নিয়ে নেন। আমাদের সন্তানকে পায়ের কাছে রেখে কাতরভাবে বলেছিলেন, আমাদের ছেড়ে যেও না।’
বানু মুশতাকের লেখার ব্যাপারে ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ পত্রিকা একবার লিখেছিল, ‘মূলধারার ভারতীয় সাহিত্যে মুসলমান নারীদের আসলে একটা রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যারা হয় নিঃশব্দে সহ্য করে যান, অথবা ব্যঙ্গ শুনতে হয়।’
‘বানু মুশতাকের লেখা এ দুই ধরনের চরিত্রকেই বর্জন করে। তার চরিত্রগুলো মানিয়ে চলে, কখনও আলোচনা করে এগোতে চায়, কখনও আবার বিদ্রোহ করে বসে। তবে সেগুলো এমন চরিত্র না, যারা সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়ে উঠতে পারে,’ লিখেছিল ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’।
লেখালেখির জন্য বানু মুশতাকের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি হয়েছিল এবং একবার এক ব্যক্তি চাকু দিয়ে আক্রমণও করেছিলেন তাকে। তার স্বামী তখন তাকে বাঁচান। ‘ধর্মের পুরুষতান্ত্রিক ব্যাখ্যাকে আমি এক নাগাড়ে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এসেছি। এগুলোই আমার লেখার মূল বিষয়’, ‘দ্য উইক’ পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তিনি।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন