বুধবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্কুলে ভর্তিতে ‘লটারি বিতর্ক’ কাম্য নয়

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ১০:২৮ অপরাহ্ন, ১৮ই নভেম্বর ২০২৪

#

ছবি : সংগৃহীত

দেশের বিভিন্ন স্থানে লটারি ভর্তি পদ্ধতি বাতিল চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করছে একদল শিক্ষার্থী।কোথাও কোথাও রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করেছে। এর সাথে কিছু কিছু অভিভাবকও শামিল হয়েছেন।এসময় তারা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে স্কুল ও কলেজে ভর্তি পদ্ধতি চালুর দাবি জানান। তাদের দাবি লটারির কারণে অনেক মেধাবী শিশু ভালো স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না। জীবনের সব পর্যায়েই যেহেতু পরীক্ষা দিতে হয়, শৈশব থেকেই তার অভ্যাস করাতে হবে, কেউ কেউ এমনও যুক্তি দিচ্ছেন।তবে এর বিপক্ষে অনেক ভিন্নমতও রয়েছে।

সরকার এরই মধ্যে লটারি কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছে।মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত অনুসারে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দেশের সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মহানগর ও জেলা সদর উপজেলায় অবস্থিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষের (২০২৫) জন্য প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি লটারির মাধ্যমে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য গত ১২ নভেম্বর থেকে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে।৩০শে নভেম্বর আবেদনপত্র গ্রহণের শেষ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।এরপর ডিসেম্বর মাসে ভর্তির লটারি প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে। লটারি শেষে ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ হবে। বরাবরের মতো জানুয়ারিতে ক্লাস শুরু হবে।

আগে কেবল প্রথম শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তি কাজ সম্পন্ন হতো। ২০২১ সালে করোনা মহামারির সময়ে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম লটারি পদ্ধতিতে শুরু হয়। এর আগে দেশজুড়ে থাকা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হতো। তবে গত কয়েক বছর ধরে কেন্দ্রীয় পদ্ধতিতে লটারির মাধ্যমে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হচ্ছে।

এক সময় কোমলমতি শিশুদের ভর্তি-যুদ্ধ নামে এক ভয়াবহ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হতো। ৫-৬ বছর বয়সী শিশুদেরও সারা বছর ধরে ভর্তি কোচিংয়ের নামে অমানুষিক চাপে রাখতো।সন্তানদের নিয়ে অভিভাবকরাও একপ্রকার যুদ্ধে নেমে যেতো। ‘ভালো স্কুল’ বলে পরিচিত স্কুলে ভর্তির জন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যুদ্ধে নামিয়ে দেয়া হতো, শিশু বয়সেই তাদের মধ্যে একপ্রকার ভীতিকর অবস্থা তৈরি করা হতো।যার জন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মোটেও প্রস্তুত ছিল না। কোচিং বাণিজ্য, ভর্তির বাণিজ্য ও শিশুদের অন্যায্য প্রতিযোগিতার চাপ থেকে বাঁচাতেই লটারি ব্যবস্থা চালু করা হয়। 

শিক্ষাবিদগণ মনে করেন, স্কুল ভর্তিতে ‘ভর্তি পরীক্ষা’র বদলে ‘লটারি’ পদ্ধতি অধিক কার্যকর। কারণ এই পদ্ধতিতে সবাই ভর্তির সুযোগ পেতে পারে। এই পদ্ধতির বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষা শিশুদের মনে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। কারণ ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হয়। এতে উত্তীর্ণ হতে না পারলে ছোট বয়সেই তাদের মনে হেরে যাওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়। যা শিশুদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এজন্য তারা লটারি পদ্ধতি চালুর পক্ষে।

ভর্তিযুদ্ধের নামে শিশুদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে, আবার তা ফিরে আসুক তা কারোরই কাম্য নয়। কোচিং আর ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত যারা তারাই আবার ভর্তি পরীক্ষা ফিরিয়ে আনার পক্ষে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করছেন। আর এক শ্রেণির অভিভাবকরা না বুঝেই ভর্তি পরীক্ষা ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনে নেমে পড়ছেন।

লটারির মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকরা।এবং কোচিং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো।এরাই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মাঠে নামিয়েছে।লটারির মাধ্যমে ভর্তি নিয়ে বিতর্ক কোনোমতে কাম্য নয়।

আই.কে.জে/


ভর্তি পরীক্ষা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন