রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক সড়কে গুলশান-বনানী সর্বজনীন পূজামণ্ডপ। ছবি: সংগৃহীত
শঙ্খনাদ, উলুধ্বনি, ঢাকঢোলের বাদ্য আর অশ্রুভেজা ভক্তির আবহে ‘দুর্গতিনাশিনী’কে সাড়ম্বরে আজ বৃহস্পতিবার (২রা অক্টোবর) বিদায় জানিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত শারদীয় দুর্গোৎসব। এদিন রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ‘পিতৃগৃহ’ থেকে পুত্র-কন্যা নিয়ে দুর্গা ফিরে যাবেন কৈলাসে তার ‘স্বামীর’ ঘরে। এক বছর পর নতুন শরতে আবার তিনি আসবেন এই ধরণিতে। মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভুজা দেবী দুর্গা; বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
পঞ্জিকামতে, দেবীর এবারের আগমন গজে বা হাতিতে। শাস্ত্রমতে, এই গজই দেবীর সবচেয়ে সেরা বাহন। দেবীর আগমন গজে হলে মর্ত্যলোক সুখ-শান্তিতে ভরে ওঠে, ধরাধামে আসে সমৃদ্ধি। বলা হয়, এর ফলাফল হয় শস্যশ্যামলা বসুন্ধরা। দেবীর গমন চলতি বছর দোলায় বা পালকিতে। যার ফলাফল সেভাবে শুভ নয়। এটি মহামারি বা মড়কের প্রতীক।
রাজধানীর অধিকাংশ মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন হয় সদরঘাটে বুড়িগঙ্গা নদীতে। এর আগে শোভাযাত্রা নিয়ে সব প্রতিমা নিয়ে পলাশীর মোড়ে জড়ো হন ভক্তরা। দুপুরের আগেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা এনে জড়ো করা হয় পলাশীর মোড় ও ঢাকেশ্বরী পূজামণ্ডপ এলাকায়। স্বল্পগতিতে চলা ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে চড়া পূজারিদের পাশাপাশি অনেকে হেঁটে শোভাযাত্রায় শামিল হন।
বিকেল ৪টায় বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটের বীণাস্মৃতি স্নানঘাটে পুরান ঢাকার শঙ্খনিধি মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে দেবীকে বিদায় জানানো শুরু হয়।
ঘাটে আসার পর ভক্তরা শেষবারের মতো ধূপধুনো নিয়ে আরতি নাচেন। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্যে নৌকা থেকে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ‘মাতৃরূপী’ দেবীকে এক বছরের জন্য বিদায় জানান ভক্তরা।
প্রতিমা বিসর্জন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপর ভূমিকায় দেখা যায়। এ ছাড়া শোভাযাত্রা যেসব সড়ক ধরে যাবে, সেসব সড়কে নেওয়া হয় নিরাপত্তাব্যবস্থা।
এর আগে বিদায়ের সকালে দশমীর বিহিত পূজা এবং দর্পণ বিসর্জনে শেষ হয় দেবীর শাস্ত্রীয় বিসর্জন। পাশাপাশি দেবী প্রতিমার হাতে জরা, পান, শাপলা ও ডালা দিয়ে আরাধনা করা হয়। এরপর পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয়।
এ ছাড়া আরাধনা আর সধবা নারীর সিঁদুর খেলার আচারে মুখরিত থাকে প্রতিটি মণ্ডপ। বিদায়ের কষ্ট ভুলে থাকতে এবং দেবীকে হাসিমুখে বিদায় জানানোর জন্য দিনটিতে ভক্তরা সাধারণত সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন।
ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা উদ্যাপন কমিটির প্রতিনিধিরা জানান, মূলত ‘দর্পণ বিসর্জনের’ মাধ্যমে সকালেই দেবীর শাস্ত্রীয় বিসর্জন সম্পন্ন হয়। মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে প্রতিমা থেকে ঘটে এবং ঘট থেকে আবার ভক্তের হৃদয়ে মাকে নিয়ে আসাকে বিসর্জন বলে।
খবরটি শেয়ার করুন