ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত প্রতি মাসে এর আগের মাসগুলোর চেয়ে দ্বিগুণ হারে ডেঙ্গু বেড়েছে। ঘন ঘন বৃষ্টি ও বাতাসের আর্দ্রতা ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলছে। অবাক করার বিষয় হলো, এবার রাজধানীর চেয়ে গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গুর বেশি বিস্তার ঘটছে।
এডিস মশা শুরুতে ঢাকা শহরকেন্দ্রিক ছিল। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা থেকে কেউ গ্রামে গেলে আর তাকে সাধারণ মশা কামড়ালে তখন ডেঙ্গুর জীবাণু ছড়ায়। ওই মশা অন্য কাউকে কামড়ালে তার ডেঙ্গু হয়। এ কারণে গ্রামে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটছে।
রাজধানীতে আগে এক-দুইদিন পর পর মশক নিধন কার্যক্রম চালানো হলেও এখন সিটি কর্পোরেশনগুলোর শিথিলতার কারণে এ কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। সার্বিকভাবে মশা নিধনে দুর্বল কার্যক্রমের কারণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামী জুলাই মাসের শেষ দিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়বে। আতঙ্কের বিষয় হলো, দিনদিন ডেঙ্গুর আচরণ পরিবর্তন হচ্ছে। এ পরিবর্তন আরো বিপজ্জনক।
আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যথা, জ্বর ও শরীরে র্যাশ ওঠা ইত্যাদি উপসর্গ ছিল। এখন জ্বর কম থাকে। কারো কারো আবার জ্বর থাকে না। এ কারণে তারা ঘরে বসে থাকেন, বুঝতে পারেন না। দুই-তিনদিন পর শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ হচ্ছে এবং কখনো কখনো আইসিইউয়ের সাপোর্টের প্রয়োজন হচ্ছে।
অনেক গবেষক ও বিজ্ঞানী অভিযোগ করেছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের যা করণীয় ছিল, সেটি করা হয়নি। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীদের মারা যাওয়ার কারণ পরীক্ষাও সম্ভব হচ্ছে না অর্থের অভাবে। ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর কারণ পরীক্ষার মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ খাতে যদি অর্থ না পাওয়া যায়, তাহলে স্বাস্থ্যসেবার অর্থ কোথায় যাচ্ছে, সেই প্রশ্ন করার অধিকার নিশ্চয়ই দেশবাসীর আছে।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। মানুষকে সচেতন হতে হবে। বাসাবাড়ি, ছাদ ও নির্মাণাধীন ভবন পরিষ্কার করতে হবে। এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংস করতে হবে।
স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। এসিতে, ডাবের খোসা থাকা অল্প পানিতেও ডেঙ্গু জন্ম নেয়। নিজের বাড়ির আশপাশে পরিস্কার করতে হবে। পূর্ববর্তী বছরগুলোর অভিজ্ঞতা বলছে, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি থাকে।
ফলে ডেঙ্গু মোকাবিলায় এখনই জরুরি ভিত্তিতে প্রস্তুতি না নেওয়া হলে সামনে ভয়াবহ দুর্যোগ অপেক্ষা করছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরগুনা, কক্সবাজারসহ সংক্রমণপ্রবণ এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতাও বাড়াতে হবে।
খবরটি শেয়ার করুন