ছবি - সংগৃহীত
অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং সিরামিক পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক বাতিলের দাবি জানানো হয়। বর্তমানে সব দেশীয় টাইলসের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং দেশীয় স্যানিটারি পণ্য উৎপাদন পর্যায়ে ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপিত রয়েছে। তারপরও নতুনভাবে শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সিরামিক শিল্প কঠিন সময় পার করছে। পরিস্থিতির উত্তরণ না হলে শিল্পটি হুমকির মুখে পড়বে।
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেড। তারপর একে একে প্রতিষ্ঠিত হয় আরো কয়েকটি সিরামিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মুন্নু সিরামিক, ১৯৯৭ সালে শাইনপুকুর সিরামিক ও ১৯৯৮ সালে আরএকে সিরামিক প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দেশীয় সিরামিক শিল্প গতি লাভ করে। বাংলাদেশ সিরামিক উৎপাদক ও রফতানিকারক সমিতির (বিসিএমইএ) তথ্য মতে, দেশে এখন ৭০টি সিরামিক কারখানা (টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার) আছে। নিবন্ধিত ৫০টির বেশি সিরামিক কোম্পানি নতুন বিনিয়োগ স্থগিত রেখেছে। পাঁচটি নতুন কারখানা শুধু গ্যাস স্বল্পতার কারণে উৎপাদন শুরু করতে পারছে না। সরকার গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, যা শিল্পের জন্য আরও বড় ধাক্কা হবে।
এসব কোম্পানিতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আছে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। দেশে বর্তমানে সিরামিক পণ্যের বাজার ৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকার। যা দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অবদান রাখছে। এই শিল্পের কারণে বছরে অন্তত ২ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হচ্ছে। কিন্তু গ্যাস-সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ শিল্পের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গ্যাস-সংকটের কারণে পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় অনেক পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বড় বড় আন্তর্জাতিক কোম্পানির অর্ডার হারাতে হচ্ছে। গ্যাস-সংকটের কারণে এরই মধ্যে খাতটির ২০-২৫টি প্রতিষ্ঠান বন্ধের পথে; বাকিরা উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। প্রতিদিন যেখানে ১২ হাজার স্কয়ার ফুট উৎপাদন করা সম্ভব, সেখানে এখন মাত্র ৬-৭ হাজার স্কয়ার ফুট হচ্ছে।
একসময় চীন ও শ্রীলঙ্কা থেকে সিরামিক পণ্য আমদানি করত বাংলাদেশ। কিন্তু এখন দেশেই বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। বিসিএমইএর তথ্যানুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের সিরামিক টাইলস ও স্যানিটারি পণ্যের চাহিদার শতকরা ৮৬ ভাগ এবং টেবিলওয়্যার পণ্যের চাহিদার শতকরা ৯৮ ভাগ দেশীয় কোম্পানিগুলো পূরণ করেছে। সুতরাং শুধু পাল্লা দেয়া নয়, বরং দেশীয় সিরামিক পণ্য বিদেশী পণ্যের তুলনায় অনেকাংশে এগিয়ে।
বর্তমানে গ্যাস-সংকট, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি এবং উৎপাদন ব্যয়ের চাপে চরম সংকটে রয়েছে সিরামিক শিল্প। ফলে এই খাত চরম দুরবস্থার মধ্যে আছে। একের পর এক অর্ডার বাতিল হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সিরামিক শিল্পের ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যৎ আরও জটিল করে তুলেছে। যার জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা একের পর এক ইউনিট বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক কারখানা তাদের উৎপাদন ৪০-৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধির কারণে নতুন আতঙ্ক শুরু হয়েছে। নতুন করে টাইলস ও সিরামিক পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে ১০-১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হয়েছে। ফলে উৎপাদন খরচ ৩৫ শতাংশ বেড়ে যাবে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন শিল্পমালিকরা। অন্যদিকে সরকারও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। যদি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয় এবং গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক না হয়, তাহলে পুরো শিল্প হুমকির মুখে পড়বে। শিল্পকে বাঁচাতে হলে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি না করা এবং আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে।
আই.কে.জে/