ছবি: সংগৃহীত
বিক্রমপুরের মেয়ে মাহমুদা সুলতানা নাঈমা শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা। বর্তমানে মেহেদি নিয়ে কাজ করে মাসে আয় করেন প্রায় ৭০ হাজার টাকা। মাঝে মাঝে তা লাখের অংক ছাড়িয়ে যায়। মাহমুদা সুলতানা নাঈমার এগিয়ে চলা, প্রতিবন্ধকতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন গণমাধ্যমের সাথে।
উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প
মাহমুদা সুলতানা নাঈমা বলেন, নিজে সাবলম্বী হওয়ার জন্যই উদ্যোক্তা হওয়া। করোনার সময় মনে হলো ঘরে বসে থেকে যদি একটা কিছু করা যায়। সেই ভাবনা থেকেই শুরু। শাড়ি আমার খুব পছন্দের পোশাক। তাই সেটা নিয়েই শুরু করলাম কাজ। ২০২০ সালের পহেলা জুলাই থেকে আমার উদ্যোগ এর যাত্রা শুরু হয়। মাত্র ৪ হাজার ৯০০ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলাম।
এখন নিজের বাসার একটা রুমকে বেছে নিয়েছি পণ্য রাখার জন্য। ইচ্ছা আছে খুব শিগগির একটা অফিস নেবো। সেখানে একটা স্টুডিও করবো। কারণ এ বছর ২০২৪ সালের ৩০শে এপ্রিল থেকে আমার মেহেদি নিয়ে কাজের যাত্রা শুরু হয়। তাই একই সঙ্গে শাড়ি এবং মেহেদির স্টুডিও রাখার চেষ্টা করবো।
মেহেদি নিয়ে কেন কাজ করেন তিনি?
নাঈমা বলেন, মেহেদির প্রতি ভালোবাসা থেকেই মেহেদি নিয়ে কাজ করা। শুরুতে আমি চেয়েছিলাম শুধু মেহেদি আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করবো। পরে আমার ক্লায়েন্টদের কাছে আমার মেহেদির রং বেশ ভালো লাগে এবং আমার ক্লায়েন্টসদের চাহিদা থেকেই মেহেদি আর্ট এর পাশাপাশি এখন অর্গানিক মেহেদি নিয়েও কাজ করছি।
চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি বলেন, খুব অল্প সময়ে আমি আমার মেহেদি আর্টের অনেক প্রশংসা পাচ্ছি। তবে এই মেহেদি শেখার পেছনে অনেক নির্ঘুম রাত জাগা অনুশীলনের গল্প আছে। নিজেকে প্রফেশনাল মেহেদি আর্টিস্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমাকে অনেক অনেক অনুশীলন করতে হয়েছে।
অর্গানিক মেহেদি নিয়ে কাজের বিষয়ে তিনি জানান, আমি খুব চাইতাম যে আমি যে মেহেদিটা ব্যবহার করবো সেটার টেক্সচার খুব বাটারি হবে এবং সিল্কি হবে। আর তার রংও খুব সুন্দর হবে। আর এটা যেন কারো হাতে কোনো ক্ষতি না করে। শুরুর দিকে আমি অনেক ধরনের মেহেদি পাউডার কিনে পরীক্ষা করেছি। এরপরে সবচেয়ে ভালোটা দিয়ে কাজ করছি এখন। আমার মেহেদির রঙে আমার ক্লায়েন্টসরা অনেক সন্তুষ্ট। অনেক অনেক পজেটিভ রিভিউ দিচ্ছে। কারণ আমার মেহেদিতে কোনো রকম সাইড ইফেক্ট হয়নি কখনো।
আর কি নিয়ে কাজ করেন মাহমুদা সুলতানা নাঈমা তা জানতে চাইলে বলেন, এখন আমি আমার মেহেদির কাজে বেশি সময় দিচ্ছি। পাশাপাশি আমার শাড়ির বিজনেসও চলছে। সেখানে আমি অনেক ধরনের ভ্যারিয়েশন রেখেছি। শাড়ি, কাপল সেট, হিজাব, রেডিমেড ব্লাউজ ইত্যাদি।
মাহমুদা সুলতানা নাঈমা পণ্য কেনার ব্যাপারে বলেন, আমি মনে করি আমার থেকে মানুষ পণ্য কেনার একমাত্র কারণ হলো আমার সততা। আর সততাই ব্যবসার মূলধন। আমি আমার জায়গা থেকে পণ্যর বিস্তারিত সম্পর্কে কোনো রকম তথ্য গোপন করি না। আমি চেষ্টা করি আসল কাঁচামাল ব্যবহার করতে এবং প্রতি ব্যাচের মেহেদি আগে নিজের উপর এপ্লাই করে তারপর সেটা ক্লায়েন্টের উপর এপ্লাই করি। কাজেই আমি আমার বিবেকের কাছে সব সময় পরিস্কার থাকি। যেটা প্রতিটা উদ্যোক্তারই করা উচিত।
আরও পড়ুন: অনন্যার রসগোল্লার চায়ের সুনাম সবার মুখে মুখে
কার অনুপ্রেরণায় তিনি এই কাজ করেন? নাঈমা বলেন, সমাজের অনেকেই ভাবে আমি পড়ালেখা করে ‘কাপড় বেচি, মেন্দি পড়াই’। ছোট করে দেখে এটাকে। তবে অনেকে উৎসাহও দিয়ে থাকে। আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আলী আকবর খান অরুণ স্যারের উৎসাহেই সাবলম্বী হওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আমার অনুপ্রেরণা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, ইচ্ছা আছে খুব শিগগির একটা অফিস নেবো এবং সেখানে একটা মেহেদি স্টুডিও করবো। পাশাপাশি আমার পেজটা একটা ব্র্যান্ডে রুপান্তর করা। সারা বাংলাদেশে ছোট হলেও একটা আউটলেট থাকবে। এই লক্ষ্যেই কাজ করে যাবো।
তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রতি পরামর্শ
তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আমার পরামর্শ হলো-বিজনেসের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হলো ধৈর্য এবং প্রতিজ্ঞাবদ্ধতা। এটা মাথায় রেখেই ব্যবসা করতে হবে যে, ‘আমি কারো থেকে কোনো সাপোর্ট পাবোনা। আমাকে একাই পথ চলতে হবে। মানুষ আমাকে অনেক কথা শুনাবে। কিন্তু আমার চিন্তা থাকবে যে আমি এটা করবোই এবং সফল হবো’। তাহলেই আমরা এগিয়ে যেতে পারবো। আমার এখন প্রতি মাসে ৬০-৭০ হাজার টাকার আয় হচ্ছে। এছাড়াও ঈদ আসলে সেটা লাখ ছাড়িয়ে যায়।
এসি/কেবি
খবরটি শেয়ার করুন