ইসরায়েলি হামলার পর ইরানের রাজধানী তেহরানে আগুন জ্বলছে। আকাশ ছেয়ে গেছে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে। ১৭ই জুন, ২০২৫। ছবি: রয়টার্স
গাজায় চলমান গণহত্যার মধ্যে ইরানে ইসরায়েলের হামলা এবং এর জের ধরে মধ্যপ্রাচ্যে যে অশান্তির বিষবাষ্পের উদ্গিরণ শুরু হয়েছে, তা বৈশ্বিক আতঙ্ক জাগিয়ে তুলেছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের হত্যা এবং এর জবাবে ইসরায়েলে ইরানের প্রত্যাঘাত যে নতুন সংঘাতের সূচনা করেছে, তা স্পষ্টতই অঞ্চলটিতে সর্বাত্মক যুদ্ধে মোড় নিচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস ও সামরিক বাহিনীকে পঙ্গু করতে ‘যতদিন লাগবে’, ততদিন যুদ্ধ চালানো হবে। ইরানও পাল্টা জবাব দিচ্ছে।
ধারণা করা হচ্ছে, এ যুদ্ধ কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এ যুদ্ধে ইসরায়েল কিংবা ইরানের পরাজয় অথবা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধ- যে কোনো কিছুই হতে পারে। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ শুধু দুটি দেশের মধ্যেই আর সীমাবদ্ধ নেই। এ যুদ্ধ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা তৈরি করেছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ যুদ্ধে তাই আমাদের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এ প্রভাব কতদূর গড়াবে, সেটা নির্ভর করছে যুদ্ধ কতটা দীর্ঘস্থায়ী হয়, এর ওপর।
বাংলাদেশের সরাসরি ইরানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক খুব বেশি নেই। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য খুব সামান্য। ইসরায়েলের সঙ্গে কোনোভাবেই বাংলদেশের কোনো সম্পর্ক নেই।
তবু এ যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সংকটে পড়বে। দেশের অর্থনীতির তিনটি খাতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। প্রথমত, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়বে, যার কারণে সব খাতে প্রভাব পড়বে।
দ্বিতীয়ত, বৈদেশিক শ্রমবাজারে প্রভাব ফেলবে। তৃতীয়ত, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে জ্বালানি খাতসহ পুরো আমদানি পণ্য সরবরাহে প্রভাব পড়বে। ইতিমধ্যে ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি দিয়েছে। হরমুজ প্রণালি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্যপথ।
দেশের মোট আমদানির ৩০ শতাংশ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। জ্বালানি তেল, খাদ্য এবং সার- এ ধরনের পণ্যগুলোর অধিকাংশ হরমুজ প্রণালি দিয়ে আমদানি হয়। মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আবর, সংযুক্ত আবর আমিরাত, কাতার এবং ওমানের মতো দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে।
দেশের শ্রমিকদের অধিকাংশ মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করেন। গত কয়েক মাসে দেশের অর্থনীতিতে যতটুকু সাফল্য, এতে সবচেয়ে বড় অবদান রেমিট্যান্সের (প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ)। মধ্যপ্রাচ্য অস্থির হলে রেমিট্যান্স কমবে। এটি দেশের অর্থনীতিতে বড় আঘাত করবে। তৃতীয়ত, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে বাংলাদেশে বিনিয়োগেও প্রভাব পড়বে। বাড়বে পরিবহন ভাড়া ও পণ্যের উৎপাদন খরচ।
প্রতিমুহূর্তে নতুন নতুন মাত্রায় মোড় নিতে থাকা এ উত্তেজনার আঞ্চলিক পরিসর থেকে বৈশ্বিক উত্তেজনায় রূপান্তরিত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে আসছে। তবে বিশ্বকে বাঁচাতে এ যুদ্ধ থামাতেই হবে।
খবরটি শেয়ার করুন