বুধবার, ২৩শে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য’ সংহত করতে ৪ দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার জরুরি বৈঠক *** লিটন দাস জয় উৎসর্গ করলেন নিহতদের স্মরণে *** সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতে সিরিজ বাংলাদেশের *** বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের সব দাবি যৌক্তিক বলে মনে করে সরকার *** বিএনপি-জামায়াতসহ চার দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা *** প্রধানমন্ত্রী দলীয় প্রধান হতে পারবেন না—এই দাবির যৌক্তিকতা নেই: সালাহউদ্দিন *** আখের চিনি দিয়ে ‘ট্রাম্প ভার্সন’ বাজারে আনছে কোকা-কোলা *** বিমান বিধ্বস্তে হতাহতদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে সরকার: প্রেস উইং *** ফরিদা পারভীনের শারীরিক অবস্থার উন্নতি, ফিরেছেন বাসায় *** জাকেরের ফিফটিতে পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ

সার্ককে সক্রিয় করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ

হাসান শান্তনু

🕒 প্রকাশ: ১০:৪১ অপরাহ্ন, ২২শে জানুয়ারী ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাকে (সার্ক) বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের উন্নয়নে কাজে লাগাতে চায় সরকার। এজন্য সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার সুচিন্তিত পরিকল্পনার পাশাপাশি বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদেরসহ উচ্চ পর্যায়ের একাধিক বৈঠক আয়োজনের তৎপরতা চালাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের মাঝামাঝি সার্কভুক্ত কোনো দেশের রাজধানীতে ওই বৈঠকের আয়োজন হতে পারে। একইসঙ্গে সার্ক সচিবালয়কে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

সার্ককে সক্রিয় করতে পারলে পুরো এশিয়া অঞ্চলের মানুষের জন্য সুফল ও কল্যাণ বয়ে আনবে বলে মনে করছে সরকার। তবে একে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগে প্রায় সব সদস্যভুক্ত দেশ আন্তরিক হলেও ভারত তেমন সাড়া দিচ্ছে না বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র বুধবার সুখবর ডটকমকে জানায়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের অভাবে সার্ক নিষ্ক্রিয়। একে প্রাণবন্ত করার উদ্যোগগুলো প্রয়োজনীয় শক্তি ও দিক-নির্দেশনা পাচ্ছে না। ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব, বিশেষ করে ভারতের ‘অনীহা ও একগুঁয়েমিপূর্ণ কূটনৈতিক আচরণের কারণে’ সংস্থাটি প্রাণ ফিরে পাচ্ছে না। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সুখবর ডটকমকে বলেন, ‘ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নয়াদিল্লির সাড়া পাওয়া পাচ্ছে না। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সার্ক পুনরুজ্জীবনের প্রচেষ্টাকে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করার কৌশল হিসেবে দেখছে ভারত। বিষয়টি ভারতের যথাযথ উপলব্ধি নয়। তবে অন্য সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকার আহবানে সাড়া দিচ্ছে।’

সার্ককে পুনরায় জীবন দেওয়ার উদ্যোগ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সার্ককে কার্যকর করতে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে ঢাকা। দক্ষিণ এশিয়ার এই সংস্থাকে জীবিত করতে ঢাকা সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।’

ইকোনমিক টাইমস’সহ প্রথমসারির ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ঘেঁটে দেখা যায়, ভারত সার্ককে বরাবরের মতো নিষ্ক্রিয় করে রাখতে চাচ্ছে। দেশটির দৃষ্টি বিমসটেকের (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) দিকে বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এশিয়ার দেশগুলোর অভিন্ন স্বার্থে সার্ককে কার্যকর করা বেশি জরুরি। এ ক্ষেত্রে ঢাকার অবস্থান সঠিক। 

সার্ক দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশ নিয়ে গঠিত। আর বিমসটেক মূলত বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো নিয়ে গঠিত। সার্কের সদস্য দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান এবং আফগানিস্তান। সংস্থাটির স্বপ্নদ্রষ্টা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। 

২১শে জানুয়াারি সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের’ সম্মেলনের ফাঁকে জার্মান  চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাকে জানান, ‘বাংলাদেশ এখনো সার্কের ধারণাকে সমুন্নত রেখেছে এবং এটিকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।’ 

ড. ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পরই সার্ককে উজ্জীবিত করতে নির্দেশ দেন। তার নির্দেশনার আলোকে উদ্যোগ নেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ১১ই সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সার্ক রাষ্ট্রগোষ্ঠী পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছি। ভারত ও অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। তবে সেই সম্পর্ক হতে হবে ন্যায্যতা এবং সমতার ভিত্তিতে।’

গত ২রা ডিসেম্বর সার্ক মহাসচিব গোলাম সারওয়ার সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার কল্যাণে সার্ককে কার্যকর আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’ প্রধান উপদেষ্টা ও সার্ক মহাসচিব সংস্থাটির কার্যক্রম আরো উন্নত করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব এবং বিভাগীয় মন্ত্রীদের অংশগ্রহণে বৈঠক ও নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন।

গত ৮ই ডিসেম্বর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে অত্যন্ত ইতিবাচক এবং তিনি চান এর কার্যক্রম স্বাভাবিক হোক।’

এ সময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা চান, আবার আঞ্চলিকভাবে আমরা একটি স্বাভাবিক সম্পর্কে ফিরে যাই। অনেক বছর ধরে সার্কের কোনো সামিট হয়নি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ করতে স্ট্যান্ডিং কমিটি পর্যায়ের মিটিং থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে চার পর্যায়ে আমরা মিটিং করবো। শেষ পর্যন্ত সামিটের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমরা তৈরি হতে পারবো।’

আই.কে.জে /

সার্ক

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন