ছবি - সংগৃহীত
‘রাতে মশা দিনে মাছি, এই নিয়ে ঢাকায় আছি’--এই প্রবাদটি রাজধানীবাসীর কাছে আজ মিথ্যা হয়ে গেছে। বর্তমানে শুধু রাতে নয়, দিনেও মশা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না নগরবাসী। কালের বিবর্তনে রাসায়নিকের থাবার কারণে মাছ, মিষ্টি, ফলমূলেও মাছির উপস্থিতি অনেকটা কমেছে। কিন্তু মশা তার দাপট শুধু বজায়ই রাখেনি,কয়েক গুণ বাড়িয়েছে। ২ কোটিরও বেশি মানুষের এই মেগাসিটি মশার কাছে যেন জিম্মি।
ফেব্রুয়ারি, মার্চ সময়টা কিউলেক্স মশা প্রজননের উপযুক্ত সময়। মশা জন্মায় ডোবা, নালা, ড্রেন, নর্দমায়। দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় অনেক ডোবা, নর্দমার উপস্থিতি রয়েছে। এছাড়া সুয়ারেজের ড্রেনগুলোর অধিকাংশের ঢাকনা না থাকার কারণে ময়লার পানিতে মশা জন্মায়। ড্রেন, ডোবা, নালা, নর্দমাগুলো পরিষ্কার না করায় মশার উপদ্রব বাড়ছে। অথচ কিছু অসৎ কর্মকর্তার ভাগবাটোয়ারার কারণে মশা নিধনের জন্য কার্যকর ওষুধ কেনা হয় না। এসব অবাধ হরিলুটের কারণে মশার দৌরাত্ম্য বাড়ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ ও ড্রেনগুলোর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না থাকা মশার বংশবিস্তারের অন্যতম কারণ। সংগত কারণেই সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।
কীটতত্ত্ববিদ ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশাবাহিত রোগসহ কিছু রোগব্যাধি দ্রুত ছড়াচ্ছে। ডেঙ্গু তেমনই একটি রোগ। এডিস মশা এর জীবাণু বহন করে। তাদের মতে, মৌসুমের শুরুতে যদি এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়, তাহলে রোগটির বিস্তার ততটা খারাপ পর্যায়ে যায় না। কিন্তু প্রতি বছর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশা নিধনে অঢেল টাকা ব্যয় করছে। তাতে কিছু অসৎ কর্মকর্তার পকেট ভারি হলেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে মশার উপদ্রব কমছে না, বরং বেড়েই চলছে।
দেশের সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে মশা নিধন খাতে শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ থাকে। এত টাকা ব্যয়ের পরও শুধু রাত নয়, দিনের বেলাও মশা থেকে মানুষকে স্বস্তি দিতে পারছে না। মশা নিধনে কর্তৃপক্ষের শুভংকরের ফাঁকি থাকার কারণে কোনো উদ্যোগই জনগণের কাজে আসছে না। শুধু রাতের ঘুম তো নয়ই, দিনের বেলার স্বস্তিও নষ্ট করছে এই মশা। অথচ ঢাকার নাগরিকদের সেবা দেয়া দুই সিটি করপোরেশনের নৈতিক কর্তব্য। বর্তমানে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি না থাকার কারণে এই সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। দুই সিটি করপোরেশনে মেয়রসহ কাউন্সিলরা না থাকার কারণে এখন দেখারও কেউ নেই। এ জন্য করপোরেশনের কর্মকর্তারা দায়সারাভাবে কাজ করছেন। মশা নিধনে ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশন প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও তাতে কোনো কাজেই আসছে না। নগরবাসী কোনো সুফল পাচ্ছেন না।
আবহাওয়া ও জলবায়ুগত কারণে অতীতেও ঢাকায় মশার উপদ্রব ছিল। কিন্তু এতো মারাত্মক অবস্থায় ছিল না। তখন মশা নিয়ন্ত্রণে নগর কর্তৃপক্ষ কাজ করেছে। সেই কার্যক্রম এখন কাগজে-কলমে আরো জোরদারের কথা বলা হলেও বাস্তবে দেখা নেই। বরং সাম্প্রতিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এসব কীটপতঙ্গের উপদ্রব অনেকাংশে বেড়েছে। তা নিয়ন্ত্রণে সুদূরপ্রসারী কোনো ধরনের কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। বিজ্ঞানীদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোতে মশা ও পানিবাহিত রোগব্যাধি ক্রমেই বাড়বে। সে হিসেবে বাংলাদেশেও এই স্বাস্থ্য সমস্যা ক্রমেই প্রকট হবে। এ জন্য জাতীয়ভাবে নীতি-কৌশল ঠিক করতে হবে। দেশে মশাবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এতে প্রতিবছর অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। যার কারণে মশার এই পরিস্থিতি কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
আই.কে.জে/