ছবি: সংগৃহীত
অনন্যা বিশ্বাস স্নাতক পড়ুয়া শিক্ষার্থী। স্বামী, সংসার, সন্তান ও পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেই হয়েছেন এক অন্যরকম উদ্যোক্তা। দিয়েছেন ‘অনন্যা বিশ্বাস কিচেন অ্যান্ড টি ল্যাব’ নামে একটি স্ট্রিট টি স্টল। সেই চায়ের দোকানের ব্যতিক্রমী রসগোল্লা ও মাসায়ালা চা অল্প দিনের মধ্যেই সাড়া ফেলেছে চা প্রেমীদের মাঝে।
অনন্যা বিশ্বাসের চায়ের দোকান রংপুর নগরীর সুরভী উদ্যানের বিপরীতে প্রধান সড়কের পাশে। সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টাব্যাপী চলে চা বেচাকেনা। এখানে পাওয়া যায় দুই ধরনের চা। রসগোল্লা চা ও মাসায়ালা চা। এই ব্যতিক্রমী দুই ধরনের চা এরই মধ্যে সাড়া ফেলেছে রংপুরের চা-প্রেমীদের মধ্যে।
অন্যন্যা বিশ্বাস সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পরিবারের কাজ ও পড়ালেখার কাজে ব্যস্ত থাকেন। সন্ধ্যার আগেই নিজের দেয়া চায়ের দোকানে আসেন এবং প্রস্তুতি নেন। সন্ধ্যার পরেই শুরু হয় চা বিক্রি।
অনন্যা বিশ্বাসের বিয়ের ৬ বছর। সংসার জীবনে কন্যা সন্তানের জননী। স্বামী দীপক বিশ্বাস। স্বামী-স্ত্রী দুজনের বাড়ি গাইবান্ধায়। তার পড়ালেখা ও স্বামীর চাকরি সূত্রে রংপুরে বসবাস। অনন্যা বিশ্বাস পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু করার আকাঙ্খা থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। ইউটিউব দেখে চা তৈরির বিষয়টি রপ্ত করেন। তবে চা তৈরির ধারণা নিয়ে নিজের সৃজনশীল চিন্তা যোগ করে স্বতন্ত্র চা তৈরি করে বাড়িতে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে দেখেন। সেই স্বতন্ত্র চায়ের নাম দেওয়া হয় রসগোল্লা চা ও মাসায়ালা চা। পরে স্বামী দীপকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। অনন্যা বিশ্বাসের উদ্যোক্তা হওয়ার পরিকল্পনা শুনে তিনি রাজি হন। যেই কথা সেই কাজ। দিপক কোম্পানির চাকরি ছেড়ে দিয়ে চা স্টলে সময় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মূলত স্ত্রী অন্যন্যা বিশ্বাসের পরামর্শেই ঋণ করে এই চা এর স্টলটি দিয়েছেন তারা। এখন স্বামী-স্ত্রী দুজনেই এই চা এর স্টলেই সময় দিচ্ছেন এবং যা আয় হচ্ছে তা দিয়েই স্বাচ্ছন্দে চলে যাচ্ছে তাদের সংসার জীবন।
এদিকে অনন্যার এমন সাহসী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে এই চা খেতে আসেন অনেকেই। কেউ কেউ দল বেঁধে আসেন। আবার অনেকেই পরিবার নিয়ে খেতে আসেন রসগোল্লা ও মাসায়ালা চা।
চা খেতে আসা কাজল বলেন, সত্যিই সাহসী সিদ্ধান্ত এই চায়ের দোকান দেওয়া। তার এই সাহসের কারণে অনেক মেয়েই এখন সিদ্ধান্ত বদলে ফেলবেন। চাকরির আশায় বসে না থেকে অন্যান্য ব্যবসায়ে মনোযোগ দিবেন। তাছাড়া মেয়েরা চাকরির আশায় না থেকে উদ্যোক্তা হলে আঁধার কেটে যাবে এই সমাজ থেকে।
আরও পড়ুন: বাঁশ দিয়ে তৈরি পণ্য বিক্রি করে চলছে কয়েক হাজার পরিবার
চা প্রেমী আশিকুর রহমান বলেন, সন্ধ্যার পরে নগরীতে হাঁটতে বের হলেই এখানে চা খেতে আসা হয়। অন্যন্যা বিশ্বাসের হাতের তৈরি চা অনেক সুস্বাদু। খুবই যত্ন করে চা তৈরি করেন তিনি। একটা চা খেলেই তৃপ্তি মেলে। বেশি সময় বসে থাকলে কখনও কখনও দুইটা চা খাওয়া হয়। তবে অন্যন্যা বিশ্বাসকে শুধু্ চা বিক্রেতা হিসেবেই দেখছি না। উনাকে রংপুরের পিছিয়ে পড়া নারী সমাজকে এগিয়ে নিতে তার এমন কর্মকাণ্ড অনন্য একটি উদাহারণ হিসেবে দেখছি।
অনন্যা বিশ্বাসের স্বামী দীপক বলেন, বাসায় অনন্যা চা তৈরির বিষয়গুলো জেনে চা এর স্টল দেয়ার ব্যাপারে শেয়ার করেন। পরে পরিকল্পনা শুনে বিষয়টিকে পজেটিভলি নিয়েছি। একরকম সহধর্মণী অনন্যা বিশ্বাসের পরামর্শে কোম্পানির চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঋণ করে এ টি-স্টলটি দিয়েছি আমরা। শুরু থেকেই ভালোই চলছে। দুজনে করপোরেট জব করে যা আয় হতো এই টি স্টল থেকে তা হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া দিন যতই যাচ্ছে ততই বাড়ছে ক্রেতাসমাগম। ক্রেতাদের তৃপ্তিতে আমাদের সার্থকতা।
অনন্যা বিশ্বাস বলেন, সত্যি বলতে কি, বর্তমানে চাকরি পাওয়া যেমন কঠিন, তেমনি চাকরি করাও অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। এজন্য চাকরির পিছনে না ছুটে কীভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায়, সেই বিষয়ে অনেক দিনের পরিকল্পনা ছিল। এজন্য ইউটিউব দেখি প্রায় সময়। হঠাৎ একদিন চায়ের একটি ভিডিও দেখি। সেই ভিডিও থেকে চা তৈরির উপকরণ জেনে নিই। পরবর্তীতে আমার নিজস্ব কিছু চিন্তা থেকে আরও কিছু উপকরণ যোগ করি। আশার কথা হচ্ছে, ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন এই রাস্তার দোকানটি একটি স্থায়ী ঠিকানায় অনেক বড় প্রতিষ্ঠান হবে। তিনি সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
এসি/ আই.কে.জে/