ছবি - সংগৃহীত
নানা কারণে বাংলাদেশিরা দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। অনেকে আবার নাগরিকত্বও ত্যাগ করছেন। অন্য দেশের নাগরিক হওয়ার জন্য বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব ছাড়ার হার দিন দিন দ্রুত গতিতে বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব বহাল রেখে দ্বৈত নাগরিকত্ব নেয়ার হার। মূলত দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগের কারণে বিদেশমুখী হওয়া দিনদিন বেড়েই চলেছে।
সরকার ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশিদের দ্বৈত নাগরিক হওয়ার অনুমোদন দেয়। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার জন এই সুবিধা পেয়েছেন। প্রথম বছর ২২৭ জনকে দ্বৈত নাগরিকত্ব দেয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ক্রমেই দ্বৈত নাগরিকত্ব নেয়ার তথ্য বাড়ছে। কয়েক বছরের ব্যবধান দিয়ে উপাত্তের দিকে তাকালে দেখা যায়, ১৯৮৯ সালে ৩১৫ জন, ২০০৮ সালে ১ হাজার ১৮০ জন, ২০১৪ সালে ১ হাজার ৬৯৯ জন, ২০২০ সালে ১ হাজার ১৮৭ জন, ২০২২ সালে ১ হাজার ৭৮৬ জন এবং ২০২৩ সালে ৪ হাজার ১৩৩ জন বাংলাদেশি দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েছেন। ২০১৭ সালের ১০ই জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৬ই নভেম্বর পর্যন্ত এই আট বছরে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েছেন ১৪ হাজার ৬৮৫ জন।
গত আট বছরে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে ৪০টির বেশি দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশীরা। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে ইউরোপের অন্যতম শীর্ষ অর্থনীতি ও প্রযুক্তির দেশ জার্মানির নাগরিকত্ব নেয়ার হার সবচেয়ে বেশি। এর পরে আছে জার্মানির প্রতিবেশী অস্ট্রিয়া এবং পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া। এই সময়ের মধ্যে ১ হাজার ২৮১ জন বাংলাদেশি জার্মানির, ৩৯২ জন অস্ট্রিয়ার, ১৮০ জন সিঙ্গাপুর, ১৫১ জন ভারত, ৬০ জন কোরিয়া, ৫৭ জন নরওয়ে, ২৫ জন যুক্তরাজ্য, ১৭ জন ইউক্রেন, ১৫ জন শ্রীলঙ্কা, ১৩ জন করে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইরান; ১১ জন ইন্দোনেশিয়া ও ৯ জন বুলগেরিয়ার নাগরিকত্ব নিয়েছেন। এ ছাড়া পাকিস্তান ও মিয়ানমারের নাগরিকত্ব নিয়েছেন ৪ জন।
ভালো চাকরির আশায় শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশই উন্নত ডিগ্রি নিয়ে আসার জন্য দেশের বাইরে যায়৷ কোনোভাবে একটা স্টুডেন্ট ভিসা সংগ্রহ করতে পারলেই তারা চলে যায়। আর একবার বাইরে গেলে আর ফিরে আসতে চায় না। আবার বেশিরভাগ অভিভাবকরা পরিস্থিতির কারণে নিজেরা দেশে থাকলেও, সন্তানের উন্নত ভবিষ্যতের আশায় বিদেশে পড়াতে পাঠিয়ে দেন।
বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস অ্যান্ড জাস্টিস সেন্টারের ‘ইয়ুথ ম্যাটার্স সার্ভে ২০২৩’ শীর্ষক সমীক্ষায় দেশের আট বিভাগের ৫ হাজার ৬০৯ তরুণ-তরুণীর মধ্যে পরিচালিত জরিপে বলা হয়েছে, শিক্ষিত তরুণদের প্রায় ৪২ শতাংশ দেশ ছাড়তে চান। এর কারণ হিসেবে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তাকে দায়ী করেছেন ৭৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ তরুণ মনে করেন, তাদের দক্ষতা অনুযায়ী দেশে চাকরি নেই।
বিদেশে পড়তে যাওয়া এত ব্যয়বহুল হওয়ার পরেও মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তাদের বাড়ি বা অন্য সব সম্পত্তি বিক্রি করে হলেও বিদেশ যেতে চাইছেন। যদি কম টাকায় বিদেশ যাওয়া যেত, তাহলে হয়তো আরো অধিক অসংখ্য শিক্ষার্থী দেশের বাইরে চলে যেত।
দেশে অল্প সংখ্যক মানসম্মত পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আছে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই মানহীন। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ভালো চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তা দেশে কিংবা বিদেশে কোথাও নেই। যার কারণে তারা বিদেশ পাড়ি দিচ্ছেন। বিদেশে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজ করারও সুযোগ থাকে এবং পাশ করার পর একটা মানসম্মত চাকরির নিশ্চয়তা থাকে। এছাড়া একজন বিদেশ গেলে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও সেই সুযোগটা তৈরি হয় এবং দেশে থাকা পরিবারের কাছে তারা আশানুরূপ আর্থিক সহায়তা দিতে পারেন।
ফলে সমাজের প্রায় প্রতিটি স্তরে তরুণদের বিদেশমুখী হওয়ার প্রবণতা দিনদিন বেড়েই চলেছে।
আই.কে.জে/