ছবি: সংগৃহীত
গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দির কাছ থেকে টাকা আদায় ও অন্য বন্দিকে নির্যাতনের অভিযোগে বহিষ্কৃত মহিলা যুবলীগ নেত্রী শামীমা নুর পাপিয়াকে কুমিল্লা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। সোমবার (৪ জুলাই) বিকেল ৫টায় বিশেষ নিরাপত্তায় তাকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে ওই ঘটনায় কারাগারের তিনজনকে শোকজ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ঘটনাটি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের সাবেক বন্দি রুনা লায়লা বলেন, তার কাছে ৭ হাজার ৪০০ টাকা ছিল। সেই টাকা কেড়ে নেয়ার জন্য কারাগারের হাজতি পাপিয়াসহ তার সহযোগীরা সিসি ক্যামেরা নেই এমন স্থানে তাকে নিয়ে যায়।
টাকা চাইলে দিতে অস্বীকার করলে তারা জোর করে সেই টাকা নিয়ে যায়। পরে পাপিয়া ও তার সহযোগীরা শিকল দিয়ে হাত-পা বেঁধে আমাকে মারধর করে। ওই বন্দি তার হাতে-পায়ে ধরলেও তিনি ছাড়েননি। নির্যাতন করেন।
জানা গেছে, কাশিমপুর কারাগারে বন্দি থাকার সময় শিক্ষানবিশ আইনজীবী রুনা লায়লাকে নির্যাতন এবং টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার রুনা লায়লা গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার কড়িহাতা গ্রামের আব্দুল হাইয়ের মেয়ে এবং মৃত এ কে এম মাহমুদুল হকের স্ত্রী।
তিনি ঢাকার কোতোয়ালি থানার ৭৩৫ নম্বর মামলার আসামি। গত ১৬ জুন থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন রুনা। তিনি গত ২৭ জুন জামিনে মুক্তি পেয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
রুনা লায়লার ভাই আব্দুল করিম গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে ২৫ জুন লিখিত অভিযোগ দেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আব্দুল করিম জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে বলেন, তার বোন রুনা লায়লার কাছ থেকে ৭ হাজার ৪০০ টাকা কেড়ে নিতে কারাগারে দায়িত্বে থাকা হাবিলদার ফাতেমা বেগম ও নাসিমা আক্তার এবং হাজতি ও কয়েদিসহ শামীমা নুর পাপিয়া, সোনালী, আনন্দিকা, অবন্তিকা ও নাজমা তাকে নির্যাতন করে। একপর্যায়ে তিনি রক্তবমি করেন এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফেরার পর আবার তাকে পেটানো হয়। বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
আরো পড়ুন: ফার্মগেটে পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনায় ৪ জন গ্রেপ্তার
সেই নির্যাতনের জেরে পাপিয়াকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) ওবায়দুর রহমান জানান, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কারণে কারাগারের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বন্দী পাপিয়াকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এ ঘটনায় তিনজনকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজ করা তিনজন হলেন- কারাগারের জেলার ফারহানা আক্তার, ডেপুটি জেলার জান্নাতুল তায়েবা ও মেট্রন হাবিলদার ফাতেমা। এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা হলে এবং তাতে দোষ পাওয়া গেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া কারাগারের ভেতরে এমন ঘটনা যাতে আর না হয়, সে বিষয়েও খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
এসি/ আই. কে. জে/