শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৫ই আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা: পুলিশ সদর দপ্তর *** মিশ্র পদ্ধতিতে সবজি চাষে সফল নাটোরের কৃষক ইলিয়াস *** রপ্তানি নেই, তবু কেন কমছে না ইলিশের দাম? *** গ্রেফতারের পর সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে *** তীব্র গরমের অস্বস্তি কবে কাটবে, জানালো আবহাওয়া অফিস *** ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রশ্ন তুললেন জয় *** ঢাবিতে ছাত্র–শিক্ষক–কর্মচারীদের দলীয় রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত *** দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ-নিন্দা-বিক্ষোভ *** অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন *** নতুন কোনো ইটভাটার অনুমতি নয়, বন্ধ হচ্ছে অবৈধ ৩৪৯১টি

রপ্তানি নেই, তবু কেন কমছে না ইলিশের দাম?

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪

#

ছবি : সংগৃহীত

ভারতে রপ্তানি না করার সিদ্ধান্তের পর সামাজিক মাধ্যমে ইলিশে দাম কমার তথ্য দেখে সম্প্রতি বাজারে গিয়ে অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশেরই জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্যটির উচ্চমূল্য নিয়ে হতাশাও জানাচ্ছেন অনেকে।

ভার্চুয়াল দুনিয়া থেকে বাস্তবের মাছের বাজার সবখানেই ইলিশের দাম নিয়ে কৌতূহল চোখে পড়ার মতো। ক্রেতাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে বিক্রেতাদেরও।

সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, ভারতে ইলিশ না পাঠানোর ব্যাপারে সরকারের অবস্থানের কথা জানিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, “আমরা ক্ষমা চাচ্ছি, আমরা ভারতে কোনো ইলিশ পাঠাতে পারব না। এটি দামি মাছ। আমরা দেখেছি, আমাদের দেশের মানুষই ইলিশ খেতে পারে না। কারণ সব ভারতে পাঠানো হয়।” তবে রপ্তানি না হওয়ার পরেও বাজারে মাছটির দাম নাগালের মধ্যে নেই বলে জানাচ্ছেন ক্রেতারা।

"রপ্তানি বন্ধ কিন্তু দাম তো কমে নাই, মাঝখান থেকে আমরা বাজারে এসে নাজেহাল হই," ঢাকার হাতিরপুল বাজারে মাছ কিনতে আসা চাকরিজীবী নার্গিস বেগম গণমাধ্যমকে বলছিলেন।

এই ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন কারণে, মৎস্য উপদেষ্টার ভাষায় 'দামী মাছটি'র দাম কমছে না। যার অন্যতম, যোগানের ঘাটতি।

আরো পড়ুন : টিকিটে ১৫ শতাংশ ছাড় দেবে বিমান বাংলাদেশ

কোন পর্যায়ে কেমন দাম?

জেলের জালে ধরা পড়া ইলিশ তিন থেকে পাঁচ হাত ঘুরে ক্রেতার কাছে আসে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এসব জায়গায় দামের তারতম্যের ওপর বাজারও ওঠানামা করে।

চাঁদপুরের আড়তগুলোতে মঙ্গলবার সকালে তিন থেকে চারশো গ্রাম ওজনের প্রতি মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২৫ হাজার টাকার আশেপাশে। অন্য মাছের মত ইলিশের ক্ষেত্রেও ওজনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে দাম। অর্থাৎ, মাছের আকার যত বড় হয়, কেজিপ্রতি দামও তত বেশি হয়ে থাকে।

এছাড়া, সমুদ্র-মোহনা থেকে ধরা মাছ আর নদীর উজানের মাছের ক্ষেত্রেও দামে বেশ কিছুটা পার্থক্য থাকে বলেও জানান মাছ বিক্রেতারা। প্রায় এক কেজি ওজনের মাছের কেজিপ্রতি দাম উৎসে এক হাজার থেকে ১১০০ টাকা। অর্থাৎ, জেলেরা প্রতি কেজি মাছের জন্য এই দাম পেয়ে থাকেন বলে জানান, ভোলার মেঘনা নদীর জে‌লে মো: ইব্রাহীম মা‌ঝি।

আড়তে ওই আকৃতির মাছের দাম ওঠে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা। যা আরো দুই-তিনশো টাকা বেশি দামে কিনতে হয় ভোক্তাকে।

মঙ্গলবার (১৭ই সেপ্টেম্বর) সকালে এক কেজি ওজনের মাছের মণ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬২ হাজার টাকা," গণমাধ্যমকে বলছিলেন চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি আবদুল বারী জমাদার।

রাজধানীর হাতিরপুল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, নয়শো গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের মাছের জন্য ১৮০০ টাকা পর্যন্ত হাঁকছেন বিক্রেতারা।

আবদুল বারী জমাদার জানান, কিছুদিন ধরে এই দামের মধ্যেই ইলিশের বেচাকেনা হচ্ছে। "গত একমাসে মণপ্রতি পাঁচ হাজার টাকার হেরফের হয়েছে। কেজিতে হয়তো দাম ৫০-১০০ টাকা বাড়ে কমে," যোগ করেন তিনি।

মি. জমাদার আরো জানান, এক কেজি থেকে দেড় কেজি ওজনের মাছ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকায়।

যেসব কারণে দাম কমে না

দেশের ইলিশ রক্ষায় সরকার প্রতি বছর পহেলা মার্চ থেকে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাসের মাছ ধরা বন্ধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এই নির্দিষ্ট সময়ে ইলিশের অভয়াশ্রমে মাছ ধরা, পরিবহন, বিক্রি ও মজুত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

এরপর মে-জুন থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইলিশ আহরণের মৌসুম। এই সময়টাকে 'পিক টাইম' বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি আবদুল বারী জমাদার বলছেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার এই সময়টায় মাছের দেখা মিলছে 'খুবই কম'।

"২০২২ সালে প্রতিদিন ১২০০ মণ ইলিশ আসতো আমাদের মোকামগুলোয়, গত বছর আসে সাত-আটশো মণ আর এইবার আসতেছে দুই-আড়াইশো মণ," বলেন মি. জমাদার।

এ বছর ৪০টি ট্রলারে দাদন (অগ্রিম অর্থ) দিয়েছেন জানিয়ে এখন পর্যন্ত একটি ট্রলার যথেষ্ট মাছ পায়নি বলে দাবি করেন তিনি। জানান, একেকটি ট্রলারে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা করে দিয়েছেন। এই দাদনদাতাদের মাধ্যমেই জেলেদের মাছ বিক্রির বাধ্যবাধকতা থাকে। এতে কমিশন এজেন্ট হিসেবে তারা দশ শতাংশ অর্থ পান।

পর্যাপ্ত যোগান না থাকলে দাম হ্রাসের সুযোগ থাকে না এমনটাই জানাচ্ছেন অন্য ব্যবসায়ীরাও। আরেকটি কারণ, জেলে ও ট্রলারের খরচ তথা ব্যবসার বিনিয়োগ ও অন্যান্য ব্যয়। বেচা বিক্রির অনুপাতে খরচও কম নয়, বলছিলেন ভোলার আড়তদার মো: ইউনুছ মিয়া। "দশ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতে ছয় হাজার টাকা খরচ করা লাগে," বলেন তিনি।

আবদুল বারী জমাদার জানান, আকৃতিভেদে একেকটি ট্রলার বানাতে ব্যয় হয় এক থেকে দেড় কোটি টাকা। সেগুলো দশ বারো বছর পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য থাকে।

ফলে, ট্রলারের বিনিয়োগ তুলে আনতে গেলেও মাছের বেচা-বিক্রি ভালো দামে হওয়া জরুরি তাদের কাছে। এছাড়া, মাছের বাজারের উচ্চ দামের জন্য কেউ কেউ সিন্ডিকেটের অভিযোগও তুলে থাকেন। তবে, তা অস্বীকার করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।

"আমরা উন্মুক্ত নিলামে মাছ বিক্রি করি। সিন্ডিকেটের কোনো সুযোগ নেই," দাবি আবদুল বারী জমাদারের। জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়লে দাম নিজে থেকেই কিছুটা কমে আসবে বলে তার দাবি।

বাংলাদেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশ মাছের অবদান প্রায় ১২ শতাংশ। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এর বার্ষিক উৎপাদন পাঁচ লাখ একাত্তর হাজার মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে।

এস/ আই.কে.জে/


ইলিশ মাছ

খবরটি শেয়ার করুন