প্রতীকী ছবি
প্রয়াত স্বজনকে স্মরণে রাখতে জেনারেটিভ এআই-এর ব্যবহার বাড়ছে দ্রুত। মাত্র কয়েকটি ছবি দিয়েই মৃত প্রিয়জনের অবতার, ভিডিও বা নতুন ছবি তৈরি করার প্রযুক্তি এখন সাধারণ ব্যবহারকারীর হাতের নাগালে।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই প্রবণতা শোকপ্রক্রিয়ার ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে এবং নৈতিকতা, সম্মতি ও ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তৈরি করছে।
মানুষ শোক সামলে ওঠে ব্যক্তিগত ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী। আর সেই জায়গায় প্রযুক্তি এখন নতুন অভিজ্ঞতার পথ খুলে দিয়েছে। জেমিনি, মিডজার্নি বা অনুরূপ জেনারেটিভ এআই টুল ব্যবহার করে অনেকেই হারানো প্রিয়জনকে এমন মুহূর্তে দাঁড় করাচ্ছেন, যা তাদের জীবদ্দশায় ঘটেনি।
কোথাও দেখা গেছে, একটি বিয়ের ছবিতে নববধূর পাশে দাঁড়িয়ে আছেন তার প্রয়াত বাবা; কেউ স্মৃতি ধরে রাখতে বা জীবনে অপূর্ণ থাকা ছবির ঘাটতি পূরণের চেষ্টায় এভাবে এআই-এর সাহায্য নিচ্ছেন।
শোক ব্যবস্থাপনাকে ঘিরে ইতিমধ্যে একটি শিল্পও গড়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপে 'গ্রিফ টেক' প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারকারীদের এমন চ্যাটবট তৈরির সুযোগ দিচ্ছে, যা প্রিয়জনের মতো আচরণ করে বা তাদের কথাবার্তার ধরন অনুকরণ করে।
বিশেষ করে হঠাৎ মৃত্যু বা বিদায় জানানোর সুযোগ না পাওয়া পরিবারগুলোর মধ্যে এই প্রযুক্তির ব্যবহারে আগ্রহ বাড়ছে। মনোবিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন, শোকের পাঁচটি ধাপের মধ্যে 'স্বীকৃতি' সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই ধাপে মানুষ প্রিয়জনের মৃত্যুকে মানসিকভাবে গ্রহণ করে। কিন্তু এআই–নির্ভর ডিপফেক ছবি বা অবতার অতীত ও বর্তমানের মধ্যে বিভ্রম তৈরি করতে পারে।
কেউ বাস্তবে জানে তার প্রিয়জন আর নেই, কিন্তু গ্রাজুয়েশন বা বিয়ের অনুষ্ঠানে তাদের এআই–তৈরি ছবিকে দেখলে মনে হতে পারে তারা কোনোভাবে উপস্থিত আছেন। মনোবিজ্ঞানে একে 'জ্ঞানীয় অসঙ্গতি' বলা হয়, যা কারও সামগ্রিক মানসিক স্থিতি নষ্ট করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রযুক্তি স্বল্পমেয়াদে সান্ত্বনা দিলেও দীর্ঘমেয়াদে শোকপ্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে বাস্তবতা মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে যায়, কারণ প্রযুক্তি মৃত স্বজনকে বারবার দৃশ্যমান করে তোলে।
নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন বাড়ছে। কোনো ব্যক্তির ছবি, কণ্ঠ বা ব্যক্তিগত স্মৃতি ব্যবহার করে তার সম্মতি ছাড়াই ডিপফেক অবতার তৈরি করা কতটা গ্রহণযোগ্য? তিনি জীবিত থাকলে কি এমন ব্যবহারে রাজি হতেন? পরিবার বা আত্মীয়দের কার কাছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার থাকবে—এমন প্রশ্নও সামনে আসছে।
এআই ব্যবহারে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। প্রযুক্তিটি এখনো বিকাশের মাঝপথে, ফলে ডেটা ফাঁস, অননুমোদিত বাণিজ্যিক ব্যবহার বা থার্ড-পার্টি সংরক্ষণ নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। অথচ মানুষ তাদের সবচেয়ে ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল স্মৃতিগুলো অনলাইনে আপলোড করছেন, যা ভবিষ্যতে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
সমালোচকদের মতে, এআই সহজেই মানুষের আবেগগত দুর্বলতাকে পুঁজি করতে পারে। তাই তারা মনে করিয়ে দেন, প্রিয়জনকে স্মরণে রাখার সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হচ্ছে মানুষের নিজস্ব হৃদয়ের স্মৃতি, প্রার্থনা ও মানবিক সম্পর্কের গভীরতা; এগুলোর কেউই প্রযুক্তির পুনর্গঠিত ছবির মতো দৃশ্যমান নয়, কিন্তু মানসিকভাবে থাকে অনেক বেশি স্থায়ী।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন