ছবি- সংগৃহীত
ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একই দিনে দুজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম (এফ এইচ) হলে চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেন একদল শিক্ষার্থী। আর জাহাঙ্গীরনগরে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতাকে কয়েক দফা মারধর করে হত্যা করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বৃহস্পতিবার শাহবাগ থানায় মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়টির ছয় শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের একজন ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগী নেতা, অন্যদের রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ক ও ছাত্রদলের চার নেতা-কর্মীসহ কিছু শিক্ষার্থী জড়িত বলে জানা গেছে। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আহসান লাবিবকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে এবং ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
এদিকে খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মোহাম্মদ মামুন নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার ভোরের এ ঘটনার জের ধরে গতকাল দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এর আগে ৭ই সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন জায়গায় ‘মব জাস্টিস’ (উচ্ছৃঙ্খল জনগোষ্ঠীর বিচার) চলতে দেখা যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে।
চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে বুধবার রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। গতকাল ভোরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ করেন কিছু শিক্ষার্থী। সকালে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিলের পর এফ এইচ হলের প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনেও বিক্ষোভ করেন ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফেডারেশনসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের কিছু নেতা-কর্মী। বিকেলের দিকে ‘গণতন্ত্রকামী শিক্ষার্থীবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’–এর ব্যানারে ক্যাম্পাসে আরেকটি বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়। এসব কর্মসূচি থেকে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাকে ‘মব জাস্টিস’ আখ্যা দিয়ে বিচারবহির্ভূত এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা-প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করা হয়।
অন্যদিকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম মোল্লার মৃত্যুর ঘটনাকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে দিনভর বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে বিক্ষোভ করেন একদল শিক্ষার্থী। গতকাল বেলা ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে দুপুরে শিক্ষার্থীদের আরেকটি দলও একই দাবিতে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন। ঘটনার বিচার নিশ্চিতসহ চার দফা দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেয় প্রগতিশীল শিক্ষকদের একটি দল।
আই.কে.জে/
খবরটি শেয়ার করুন