শুক্রবার, ৫ই ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২১শে অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** কলকাতায় পাঁচ জেএমবি সদস্যের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড *** নির্বাচনে সহায়তা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে ব্রিফ করল জাতিসংঘ *** কাফু–ক্যানিজিয়ার সঙ্গে ঢাকায় নৈশভোজের সুযোগ *** নতুন গণমাধ্যম নীতি নিয়ে আপত্তি, পেন্টাগনের বিরুদ্ধে নিউইয়র্ক টাইমসের মামলা *** প্রধান উপদেষ্টাকে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর ফোন, বন্যায় সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা *** খালেদা জিয়াকে নিয়ে নির্মিত সরকারি ডকুমেন্টারি প্রকাশ *** একটি মানবশিশুকে যেভাবে পাহারা দিলো চারটি কুকুর *** অনিবার্য কারণ ছাড়া বিএনপি নির্বাচনি মাঠে থাকবে: নজরুল ইসলাম খান *** নিবন্ধন পাচ্ছে ‘আমজনতার দল’, প্রতীকের বিষয়ে যা জানা গেল *** এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেরি হতে পারে, জুবাইদা রহমান ঢাকায় আসছেন

মুসলিমদের জন্য গড়ে ওঠা বিলাসবহুল হালাল আবাসন যে কারণে আলোচনায়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৯:৩০ পূর্বাহ্ন, ১৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের মুম্বাইয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি বিলাসবহুল হালাল আবাসন প্রকল্প ঘিরে ভারতে নতুন করে শুরু হয়েছে সাম্প্রদায়িক বিতর্ক। চলতি মাসের শুরুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে ভাইরাল হয় ‘সুকুন এম্পায়ার হালাল টাউনশিপ’ নামের ওই আবাসন প্রকল্পের বিজ্ঞাপন।

বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, পেন্টহাউস, ইনফিনিটি পুলসহ নানা বিলাসবহুল সুবিধা রয়েছে ওই আবাসন প্রকল্পে। ওই বিজ্ঞাপনে হিজাব পরিহিত এক নারী ‘অথেনটিক কমিউনিটি লিভিং’, ‘হালাল পরিবেশ’, ‘শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ’, ‘একই মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রতিবেশী’—ইত্যাদি সংলাপ ব্যবহার করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। খবর এনডিটিভির।

তার বর্ণনার সঙ্গে ভিজ্যুয়ালে দেখানো হয় টুপি পরা এক ব্যক্তি কোরআন পড়ছেন, ‘প্রার্থনার জায়গা’র কথা যখন উল্লেখ করা হয়, তখন গম্বুজযুক্ত একটি স্থাপনার ভিজ্যুয়াল দেখানো হয়—মূলত সেটিকে মসজিদ বোঝানো হয়েছে।

ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পরপরই হিন্দুদের একাংশ ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। বিশেষ করে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের প্রবল ক্ষোভের কারণ হয়েছে এই বিজ্ঞাপন। তাদের ভাষ্য—এই প্রকল্পের মাধ্যমে হিন্দু-মুসলিম বিভেদ উসকে দেওয়া হচ্ছে। সুকুন এম্পায়ার প্রকল্পটিকে ভারতের সংহতি বিনষ্টের একটি ‘গোপন ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করছেন তারা। তারা বলছেন, ভারতের আইন ও রীতির বাইরে এই প্রকল্পের মাধ্যমে আলাদা করে ‘শরিয়াহ ভিত্তিক সমান্তরাল ব্যবস্থা’ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।

ব্যাপারটা এখানেই থামেনি। এই ইস্যুতে মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। দুই সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সিঙ্গাপুরের সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্রেইটস টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন প্রিয়াংক কনুনগো ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিসকে বলেছেন, ‘এই প্রকল্প “দেশের মধ্যে দেশ” তত্ত্বের বাস্তবায়ন। আর এই বিজ্ঞাপন ইঙ্গিত দেয় যে মুসলিমরা অসহিষ্ণু। আজ তারা আলাদা টাউনশিপ চাচ্ছেন, কাল মুসলিম চিকিৎসক চাইবেন, এরপর মুসলিম পুলিশ চাইবেন।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারতের শহরাঞ্চলে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যকে নতুন করে সামনে এনেছে এই প্রকল্প। আর এই বৈষম্যের কারণেই শহরগুলোতে গেটো ধরনের কমিউনিটির চাহিদা বেড়েছে। শুধু নিরাপদ আবাসন নয়, ধর্ম চর্চার স্বাধীনতার জন্যও এই ধরনের প্রকল্পগুলোর চাহিদা বেড়েছে।

সুকুন এম্পায়ার প্রকল্পটি এমন সময়ে সামনে এসেছে, যখন ভারতে মুসলিমদের প্রকাশ্যে ধর্মীয় আচার পালন ক্রমশ বাধার মুখে পড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, পার্ক বা অন্যান্য জায়গায় নামাজ পড়াকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন না অনেক হিন্দু। এমন ঘটনায় পুলিশি পদক্ষেপও দেখা গেছে।

২০১৪ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসার পর দেশটি ধর্মীয়ভাবে আরও বিভক্ত হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু এরপরও এই ‘হালাল টাউনশিপ’গুলোকে সমর্থন করেন না অনেক মুসলিমও।

তাদের আশঙ্কা, এতে ইসলামি রক্ষণশীলদের প্রভাব বাড়বে, ধর্মের কঠোর রূপ চাপানো হবে এবং ভারতের বহুসংস্কৃতির বৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভারতের সংবিধান ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য নিষিদ্ধ করলেও, বাস্তবে দেশে আবাসনের ক্ষেত্রে বৈষম্য ব্যাপকভাবে দেখা যায়।

শুধু ধর্ম নয়, বরং বর্ণ, বৈবাহিক অবস্থা, লিঙ্গ পরিচয়, এমনকি খাদ্যাভ্যাসের ভিত্তিতেও মানুষকে আবাসিক কমপ্লেক্সে অবাঞ্ছিত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, সব শাকাহারী (নিরামিষাশী) কমপ্লেক্সে আমিষাশীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।

২০২১ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে, দিল্লি ও মুম্বাইতে সাধারণ আবাসিক এলাকায় মুসলিমরা নিজেদের অবাঞ্ছিত মনে করছেন। সেখানে বাসা ভাড়া নিতে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন। তিন বছর ধরে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করে এমন পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে হাউজিং ডিসক্রিমিনেশন প্রজেক্টের এই গবেষণা প্রতিবেদনে।

জে.এস/

মুম্বাই হালাল আবাসন প্রকল্প

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250