ছবি: সংগৃহীত
গাধা খুবই উপকারী প্রাণী। সভ্যতা সৃষ্টির পরতে পরতে অবদান আছে গাধারও। সংকীর্ণ ও দুর্গম পথের পণ্য পরিবহনে গাধাকে সহজেই ব্যবহার করা যায় যা অন্যপ্রাণি দিয়ে সহজে সম্ভব হতো না।
তবে গাধার চেয়ে মানুষকেই বেশি শুনতে হয় ‘তুই একটা গাধা’ এই বাক্যটি। মূলত যাদের বুদ্ধি একটু কম তাদের হরহামেশায় গাধা বলে থাকে মানুষ। বোকা অর্থেও গাধা শব্দটি ব্যবহার করা হয়। কোন কাজ করতে না পরলে, বাবা-মা তার সন্তানকে কিংবা পড়াশোনা না পাড়লে, শিক্ষক তার ছাত্র-ছাত্রীদের গাধা বলে সংবোধন করে থাকেন। মোদ্দাকথা ‘গাধা’ শব্দটি নেতিবাচক অর্থে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু গাধা কী আসলেই গাধা। মোটেও বোকা নয় গাধা! আর পাঁচটা প্রাণীর চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমান।
এদিকে দেশের জাতীয় চিড়িয়াখানায় ধারণ ক্ষমতার চেয়ে গাধার সংখ্যা বেড়ে গেছে বলে জানা গেছে। যার কারণে ভারসাম্য আনতে অতিরিক্ত গাধাগুলো বিক্রির সিদ্ধান্তও নিয়েছে মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
চিড়িয়াখানার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ধারণক্ষমতা অনুযায়ী চিড়িয়াখানায় গাধা রাখার সক্ষমতা ৬টি। তবে সেখানে বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি; ১৩টি। এতে অতিরিক্ত গাধাগুলোর জন্য স্থান সংকুলান হচ্ছে না।
এ ছাড়া গাধার মতোই ঘোড়া, সাপ, জলহস্তী, পাখিসহ বিভিন্ন প্রাণীর সংখ্যা সাম্প্রতিককালে বেড়ে গেছে। ফলে গাধার পাশাপাশি এসব প্রাণীও বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অনুমতি চেয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে চিঠিও দিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
ধারণক্ষমতার বেশি থাকা প্রাণীর প্রজাতির সংখ্যা ১০টি। তবে ৬টি প্রজাতি বিক্রি করতে চায় কর্তৃপক্ষ। সেগুলো হলো- গাধা, অ্যারাবিয়ান ঘোড়া, দেশি ঘোড়া, ইমু পাখি, দেশি কবুতর ও জালালি কবুতর।
পাশাপাশি পাখি বা সাপের মতো কিছু প্রাণী অবমুক্ত করে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন শুধু সবুজ সংকেতের অপেক্ষা।
এ বিষয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার গণমাধ্যমকে বলেন, চিড়িয়াখানাতে কয়েকটি প্রজাতির সংখ্যা বেড়ে গেছে। এর মধ্যে গাধা অন্যতম। আমাদের যে সেড রয়েছে, সেখানে ৬টি গাধা রাখার কথা। বর্তমানে গাধার সংখ্যা রয়েছে ১৩টি। আমরা ৭টি গাধা বিক্রি অথবা বিনিময় বা স্থানান্তর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের ধারণ ক্ষমতার মধ্যে আনতে চাই।
তিনি আরও বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাধার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নিজের খাচার বাইরেও অন্য খাচায় স্থান হয়েছে গাধার। গয়ালের খাচায় দেয়া যায় গাধাকে। ওয়াটার বাক এবং ঘোড়ার খাচাতেও দেখা মেলে গাধার।
আরও পড়ুন: ঈদে ঢাকা ছাড়বে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ
অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রখর কৌতূহলী গাধা কোনো ঘটনায় সহজে চমকে যায় না। মরুর দেশে গাধা ৬০ মাইল দূরে থেকে অন্য গাধার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে। বড় কান, তাদের শরীর শীতল রাখতে সাহায্য করে। গাধার রয়েছে অবিশ্বাস্য স্মৃতিশক্তি। ২৫ বছর আগে দেখা এলাকা, এমনকি বহু বছর আগে দেখা গাধাদের তারা সহজেই চিনতে পারে। গাধাকে ভয় দেখিয়ে বা জোর করে কোনো কাজ করিয়ে নেওয়া খুব কঠিন একটা ব্যাপার।
মিশরে ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য তৈরি অধিকাংশ ধাতু বহন করেছিলো গাধা। গ্রিসে সংকীর্ণ ও দুর্গম পথের পণ্য পরিবহনে ব্যবহার করা হয় গাধাকেই। কৃষি পণ্য বহনকারী প্রাণী হিসেবে রোমান আর্মিরা ব্যবহার করতো গাধাকে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় জিনিসপত্র নিয়ে সহজে চলাফেরা করতে পারায় ভারতের রাজস্থান ও জয়পুরের অন্যতম বাহন গাধা।
এসকে/
খবরটি শেয়ার করুন