ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার মেঘনা নদীর তীরবর্তী গ্রাম লালপুরের
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার মেঘনা নদীর তীরবর্তী গ্রাম লালপুরের শুটকির খ্যাতি এখন দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বজুড়ে। দেশের বিভিন্ন এলাকার চাহিদা পূরণ করে এখানকার শুটকি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। কোনো ধরনের রাসায়নিক উপাদান মেশানো ছাড়া ফরমালিনমুক্ত দেশি প্রজাতির মাছ থেকে এ শুটকি উৎপাদন করায় এর স্বাদ হয় আলাদা। এই শুটকির সুনামও রয়েছে দেশ-বিদেশে। প্রতি বছরই এখান থেকে বিদেশে রপ্তানি হয় শত কোটি টাকার শুটকি।
সরেজমিনে দেখা যায়, আশুগঞ্জের লালপুরে চলছে শুটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ। এরই প্রেক্ষিতে নদীর পাড়ে তৈরি করা হয় শত শত ডাঙ্গি। এসব ডাঙ্গিতে চলে শুটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ। এগুলোর মধ্যে পুঁটি, ট্যাংরা, শৈল, আইড় এবং ম্যানি মাছের শুঁটকি অন্যতম। রোদে শুকানো এই শুঁটকি নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিক্রি উপযোগী করে তোলা হয়। এখানে শুটকি প্রক্রিয়াজাতকরণে কাজ করছেন প্রায় এক হাজার নারী-পুরুষ। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নিরলস কাজ করেন তারা।
নদী থেকে মাছ ধরে এনে রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় সুস্বাদু শুটকি। কোনোরকম কেমিকেল বা ফরমালিন ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা হচ্ছে এসব শুস্বাদু শুটকি। আর এসব শুটকি দেশের বিভিন্ন এলাকার চাহিদা পূরণ করে পাঠানো হয় বিদেশে। ভারত, নেপাল, সৌদি আরব, আমেরিকা, লন্ডনসহ বেশ কয়েকটি দেশে পাঠানো হয় এখানে উৎপাদিত শুটকি। বিদেশে এর কদরও রয়েছে অনেক। সব মিলিয়ে বছরে প্রায় শত কোটি টাকার শুটকি এই মেঘনার পাড় থেকে সরবরাহ করা হয়।
তবে এখানে শুটকি প্রক্রিয়াজাতকারীরা পাচ্ছেন না কোনও সরকারি পৃষ্টপোষকতা। স্থানীয় আড়তদার বা মহাজনদের কাছ থেকে দাদন হিসেবে তাদের পুঁজি সংগ্রহ করতে হয়। তাই কম সুদে জামানতবিহীন ব্যাংক ঋণ চান তারা। লালপুরের শুটকি প্রক্রিয়াজাতকারী শিখা রানি দাস জানান, প্রায় একশ’ ডাঙ্গিতে প্রতিদিন শুটকি উৎপাদনের কাজ করছেন শ্রমিকরা। ব্যাংক থেকে ঋণ সহযোগিতা পাওয়া গেলে আরও বেশি পরিমাণে শুটকি উৎপাদন করা সম্ভব হতো।
শুটকি ব্যবসায়ী রমজান আলি বলেন, পুঁজির অভাবে আমরা এখন আর আগের মতো ব্যবসা করতে পারছি না। আগে মাছের দাম কম ছিল। দিন দিন মাছের দাম যেমন বাড়ছে, তেমনি শ্রমিকের মজুরিও বাড়ছে। এখন অল্প টাকায় এই ব্যবসা চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। অনেকেই এই ব্যবসা করে পথে বসেছে।
এ প্রসঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ জেড এম আরিফ হোসেন বলেন, ব্যাংকিং খাত যদি তাদের ঋণ দানে এগিয়ে আসে, তাহলে তারা চড়া সুদের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারবে।
শান্তনু/ আই.কে.জে