ছবি: সংগৃহীত
সোনারগাঁয়ে চলছে তিনদিনব্যাপী বউ মেলা। গত বছরগুলোয় বৈশাখের দ্বিতীয় দিনে হলেও এবারে বৈশাখের প্রথম দিন শুরু হয় বউমেলা।
সোমবার (১৫ই এপ্রিল) মেলার দ্বিতীয় দিনে মেলায় উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। এ মেলাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীর অনেকে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মেলা ও বটবৃক্ষকে সিদ্ধেশ্বরী দেবী বলে আখ্যায়িত করেন। পুরানো এই বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে পালিত হচ্ছে বউমেলা।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ভট্টপুর জয়রামপুর গ্রামের আদি বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করে এই বউমেলা বসে। প্রায় ২০০ বছরের আদি বটবৃক্ষের নিচে সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন ফল-ফলাদির ঝুড়ি নিয়ে পূজা অর্চনার জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন নববধূ থেকে শুরু করে দু’তিন সন্তানের জননীরা। তাদের সঙ্গে টুকটুকে রঙ্গিন ফুলেল সাজে দাঁড়িয়ে সনাতনী কুমারী মেয়েরা। সবার দৃষ্টি বটবৃক্ষের দিকে।
হিন্দুধর্মাবলম্বীদের পঞ্জিকা অনুযায়ী পহেলা বৈশাখের দিনই পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে মেলা শুরু হয়। বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে প্রতি বছর উপজেলা পরিষদের পাশে ভট্টপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ঐতিহাসিক বউমেলা বসে।
রোববার (১৪ই এপ্রিল) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সিদ্ধেশ্বরী বটতলার পদতলে (সনাতন) হিন্দু সম্প্রদায়ের শত শত নর-নারীরা পহেলা বৈশাখের এই পূজায় অংশ নেন। সোমবারও (১৫ই এপ্রিল) দিনভর ছিল লোকজনের ভিড়। মঙ্গলবার (১৬ই এপ্রিল) এই মেলার শেষ দিন।
রোববার সকালে পূজার আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে শুরু হয় তিনদিনব্যাপী বউমেলা। মেলায় পূজা-অর্চনা ছাড়াও বাঙালি সংস্কৃতির প্রাচীন ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়া যায়। এই মেলায় মৃৎ শিল্পীদের তৈরি নানা রঙয়ের টেপা পুতুল, হাতি, ঘোড়া, ময়না, টিয়া, বাঘ-ভাল্লুক, হাঁড়ি পাতিল পাওয়া যায়। মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, কাঠ ও বাঁশের তৈরি লোকপণ্য ছাড়াও মেলায় পাওয়া যায় বাহারি মিষ্টান্ন সামগ্রী। উল্লেখ্য,সোনারগাঁয়ের বউমেলা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর মধ্যে একটি।
আরো পড়ুন: সাংবাদিককে কারাদণ্ড দেওয়া এসিল্যান্ডকে বদলি
সনাতন ধর্মাবলম্বীর অনেকের মতে, বউমেলায় পূজা-অর্চনা করলে পুরনো বছরের স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া বিবাদকে দুরে ঠেলে দিয়ে একজন বধূ স্বামী সোহাগিনী হয়ে উঠেন এবং নতুন বছরে স্বামীর সংসারকে ধন-ধান্যে ভরে তুলতে পারেন। প্রেমে সফল ও দ্রুত বিয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ার জন্য এখানের মাটি খুবই উপকারী মনে করে দিনটিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীর লোকেরা মাটি সংগ্রহ করে থাকেন।
মেলায় আসা নববধূ কাকলী সাহা, রঞ্জিতা রানী দাস ও মিতুলী পাল গণমাধ্যমকে বলেন, সংসারের সুখ শান্তি ও স্বামী সন্তানের মঙ্গল কামনায় আমরা এখানে এসেছি। বড়দের কাছ থেকে শুনেছি মেলায় এসে পূজা-অর্চনায় স্বামী সন্তান ও সংসারের কল্যাণ কামনায় সফল হয়।
পুরোহিত চন্দন ভট্টাচার্য গণমাধ্যমকে বলেন, বউমেলায় সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীরা এসে ভিড় করেন সিদ্ধেশ্বরী বটতলায়। এবারে পঞ্জিকা অনুযায়ী বৈশাখের দিনে মেলা। রোববার সকালে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পূজা-অর্চনা হয়ে মেলা শুরু হয়। এই মেলায় পূজা-অর্চনা মূলত একদিনে। কিন্তু মেলা জমে তিনদিন। এ মেলাটি নারীকেন্দ্রিক হলেও হিন্দু-মুসলমান থেকে শুরু করে সব ধর্মাবলম্বীর মানুষ এখানে আসেন।
বউমেলার আয়োজক কমিটির কর্মকর্তা নিলোৎপল রায় গণমাধ্যমকে বলেন, নবরূপে এসো নববর্ষ ধন-ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরায় ‘এসো হে বৈশাখ এসো’নতুন বছর সবার জীবনে মঙ্গল বয়ে আনুক এই আহ্বানের মধ্য দিয়ে এবারও বর্ষবরণ উৎসবে আমরা সিদ্ধেশ্বরী কালী পূজার আয়োজন করেছি।
সিদ্ধেশ্বরী বটতলার পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি মানিক ঘোষ গণমাধ্যমকে জানান, সবার সহযোগিতায় বউ মেলায় পূজা অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ গণমাধ্যমকে জানান, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বউ মেলায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মেলা উপভোগ করতে হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও মুসলিম ধর্মের লোকজনও অংশ নেন।
এইচআ/