আলী ইমাম মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের খাদ্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার মনে করেন, শেখ মুজিবুর রহমান জাতির পিতা। তার রেখে যাওয়া দলটি (কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ) কিংবা এর কোনো অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীর বাড়াবাড়ি যা-ই থাকুক না কেন, শেখ মুজিব স্থান করে নিয়েছেন এসব কিছুর ঊর্ধ্বে। প্রজন্মান্তরে তাকে নিয়ে চর্চা আরও প্রসারিত হবে। তাকে নিয়ে ভীতি সৃষ্টি করার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে তা বিঘ্নিত হবে।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শব্দের আগে-পরে অন্য কোনো বিশেষণ যোগ করতে হয় না। ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু রয়েছে তার অমর কীর্তি। এ দেশের কোটি কোটি মানুষ তাকে অন্তর থেকে ভালোবাসে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের পেছনে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত এবং কয়েক কোটি মানুষের নানা ধরনের ত্যাগ রয়েছে। এই পথযাত্রায় সর্বশ্রেষ্ঠ সংগঠক ও নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি জাতির পিতা। এটা কেউই ভুলতে পারে না। তার রেখে যাওয়া দলটি কিংবা এর কোনো অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীর বাড়াবাড়ি যা-ই থাকুক না কেন, বঙ্গবন্ধু স্থান করে নিয়েছেন এসব কিছুর ঊর্ধ্বে।’
খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। প্রজন্মান্তরে বঙ্গবন্ধু-চর্চা আরও প্রসারিত হবে, এ প্রত্যাশা রয়েছে। তাকে নিয়ে ভীতি সৃষ্টি করার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে তা বিঘ্নিত হবে।’
২০১৭ সালের ৪ঠা আগস্ট দৈনিক প্রথম আলোতে লেখা এক উপসম্পাদকীয়তে বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে এভাবেই মূল্যায়ন করেন আলী ইমাম মজুমদার। তার লেখাটি ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভীতি সৃষ্টি কেন’ শিরোনামে পত্রিকাটির ছাপা সংস্করণে প্রকাশিত হয়। লেখাটিতে তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনারও (২০২৪ সালের ৫ই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন) প্রশংসা করেন।
শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যাকাণ্ডের মাস আগস্টে (১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট) বেসরকারি টিভি চ্যানেল টোয়েন্টিফোর তাকে নিয়ে প্রতিবেদনের নামে মিথ্যাচার করেছে। ইউরোপ প্রবাসী ব্লগার ও ফেসুবক এক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য এক ভিডিওতে দাবি করেন, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নিহতের সংখ্যা সর্বোচ্চ দুই হাজার।’ ইতিহাস বিকৃতির এসব আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গে আলী ইমাম মজুমদারের মতো ব্যক্তিত্বের মূল্যায়ন এখনো প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, তিনি সাবেক মন্ত্রিপরিষদের সচিব ও কলামিস্ট, বিশিষ্ট নাগরিক এবং বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রথম আলোর উপসম্পাদকীয়তে আলী ইমাম মজুমদার ২০১৭ সালের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। তা হল- বরিশালের আগৈলঝাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তারিক সালমন দায়িত্ব পালনকালে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আমন্ত্রণপত্রে শেখ মুজিবের ছবি বিকৃতি ও তাকে অবমাননার কথিত অভিযোগ প্রসঙ্গে। ওই ইউএন‘র বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এবং বরিশাল আইনজীবী সমিতির সভাপতি তখন মামলা দায়ের করেন। যা আসলে ছিল ওই নেতার এক ধরনের ফ্যাসিবাদী আচরণ।
অনাকাঙ্খিত ওই ঘটনার কথা উল্লেখ করে আলী ইমাম মজুমদার কলামে লেখেন, ‘(শেখ মুজিবের ছবি) আদৌ বিকৃত নয়, এমন কথা বলেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা)। সরকারি দল আওয়ামী লীগ মামলার বাদী তাদের এই জেলা নেতাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে।’ এ ঘটনার উল্লেখ করে তিনি কর্তৃত্ববাদী সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন প্রথম আলোর লেখায়।
খবরটি শেয়ার করুন