ছবি - সংগৃহীত
বর্তমান সময়ে অন্য সময়ের চেয়ে মশার উপদ্রব খুব বেড়েছে। নগরবাসীরা দিনেও মশার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। অন্যদিকে সন্ধ্যা হওয়ার আগে থেকেই দরজা-জানালা সব বন্ধ করে বদ্ধ ঘরে থাকতে হয়। অথচ মশক নিধনে দুই সিটি কর্পোরেশনের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা ছিল। কিন্তু মেয়র-কাউন্সিলরদের অপসারণের পর মশক নিধন কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। মশক নিধনকারী কর্মীদের দেখা পাওয়া যায় না। প্রতিদিন সকাল-বিকাল দুবেলা মশা নিধনে বিষাক্ত কীটনাশক ছিটানোর কথা থাকলেও এখন সপ্তাহে একদিনও ঔষধ ছিটানো হচ্ছে না।
সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার ঘনত্ব বেড়ে যায়। বর্ষায় যেখানে-সেখানে বৃষ্টির পানি জমে থাকে এবং খুব সামান্য পানিতেই এই মশা বংশবিস্তার করতে পারে। নাগরিক সচেতনতার অভাব থাকায় মানুষ যত্রতত্র পলিথিনের ব্যাগ, ডাবের খোসা, বোতল, ক্যান, পরিত্যক্ত টায়ার বা বিভিন্ন ধরনের পাত্র ফেলে রাখে। সেগুলোতে জমা বৃষ্টির পানিতে এডিস মশা অনায়াসে বংশবিস্তার করতে পারে। এ ছাড়া অনেক বাড়ির ছাদে, বারান্দায় ফুলের টব রাখা হয় এবং সেগুলোতে পানি জমে থাকে। অনেকের ঘরেও ছোটখাটো পাত্রে পানি জমে থাকে। নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে তো রীতিমতো মশার চাষ করা হয়। আর দুই বাড়ির মধ্যখানে সরু জায়গায় রীতিমতো আবর্জনার স্তূপ জমে থাকে। এসব জায়গায় এডিস মশার বংশবিস্তার দ্রুততর হয়। বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা থাকলেও এখন সারা বছরই মশার উপদ্রব দেখা যাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে শীতেও মশার ব্যাপক প্রভাব থাকে। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছরও পুরো শীত জুড়েই মশার প্রকোপ থাকবে।
মশার কারণে ডেঙ্গুর প্রভাব মারাত্মকভাবে বেড়েই চলছে। প্রতিবছর কী পরিমাণ লোক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায় না। কারণ ৪০টির মতো হাসপাতালের তথ্য দিয়ে হিসাব করা হয়। কিন্তু এর বাইরেও অসংখ্য রোগী অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নেন এবং অনেকেই বাসায় চিকিৎসা নেন। অধিকাংশ লোকই পরীক্ষা করান না, ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেন।
মশার উৎপাতে জনজীবন অতিষ্ঠ। বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ থাকলেও সে অনুযায়ী মশক নিধনে নেই দুই সিটি কর্পোরেশনের তেমন কোনো কার্যক্রম। তাই মশা নিয়ে দুর্ভোগ বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মশাবাহিত নানা রোগ। প্রায় প্রতিটি পরিবারে মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকনগুনিয়া, ফাইলেরিয়া, জিকা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও মশা নিধন কর্মসূচি শুরু করা প্রয়োজন। মশক নিধনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়লেও মশা নিধনে নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ।
আই.কে.জে/