ছবি : সংগৃহীত
ইউনিয়ন পরিষদ হলো স্থানীয় সরকার পর্যায়ের সর্বশেষ স্তর। তৃণমূলে জনগণের সেবা প্রদান করে ইউনিয়ন পরিষদ। একজন চেয়ারম্যান, নয় জন পুরুষ ও তিনজন মহিলা মেম্বার নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত। তারা সকলেই জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেন একজন পরিষদ সচিব। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স, চারিত্রিক সনদপত্র, ভূমিহীন সনদপত্র, ওয়ারিশ সনদপত্র, অবিবাহিত সনদপত্র, প্রত্যয়নপত্র, অস্বচ্ছল প্রত্যয়নপত্র, নাগরিক সনদপত্র, উত্তরাধিকার সনদপত্র ইত্যাদি সেবা প্রদান করা হয়।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সারা দেশে প্রায় চার হাজার ৫৮১টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে দুই হাজার ৯৮১ জন চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন। আত্মগোপনে রয়েছেন এক হাজার ৬০০ জন। প্রতিদিনিই এই সংখ্যা বাড়ছে। আত্মগোপন বা অনুপস্থিত থাকা চেয়ারম্যান পদে ৮৭২ প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া প্যানেল চেয়ারম্যান না থাকায় ৫৫৫টি ইউনিয়নে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। ১৭৩টি ইউনিয়ন পরিষদ এখনো শূন্য রয়েছে। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এসব ইউনিয়নে প্যানেল চেয়াম্যান ও প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তবে আত্মগোপনে থেকেও অনেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করে দায়িত্ব পালন করছেন।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি সরাসরি অংশ না নেয়ার কারণে অধিকাংশ পরিষদেই আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থিত দল থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। কিছু জায়গায় বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এজন্যই বিএনপিসহ অন্যান্য দল চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের অপসারণ করতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু জনগণের ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে সব চেয়ারম্যান বা সদস্যকে অপসারণ করেনি সরকার।
আরো পড়ুন : গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক
স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদের আইন অনুযায়ী, পদত্যাগ করলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যপদ শূন্য হবে। এ ছাড়া পদত্যাগ, মৃত্যু বা অন্য কারণে চেয়ারম্যান পদ শূন্য হলে নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব না নেয়া পর্যন্ত প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করবেন। তবে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি বা দণ্ডিত হলে কিংবা পরিষদের স্বার্থপরিপন্থি কাজ করলে চেয়ারম্যানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবে সরকার। এ ছাড়া দুর্নীতি, অসদাচরণ বা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো অপরাধ কিংবা বিনা অনুমতিতে দেশত্যাগের কারণে ইউনিয়ন পরিষদ আইন অনুযায়ী তাদের অপসারণের সুযোগ রয়েছে।
কিন্তু সরকার বিশেষ অধ্যাদেশ জারি করে চেয়ারম্যানদের বরখাস্ত করে। সেখানে বলা হয়েছে, অনুপস্থিত চেয়ারম্যানদের কাজ পরিচালনা এবং জনসেবা অব্যাহত রাখার জন্য স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ধারা ৩৩, ১০১ ও ১০২ অনুযায়ী বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসক স্ব স্ব অধিক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবেন। প্যানেল চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে অথবা যে কোনো জটিলতা পরিলক্ষিত হলে বর্ণিত আইনের ধারা ১০১ ও ১০২ প্রয়োগ করে বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসক স্ব স্ব অধিক্ষেত্রে তার অধীন কর্মকর্তা, যেমন—উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা সহকারী কমিশনার (ভূমি)-কে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে সচল রেখে জনসেবা অব্যাহত রাখবেন।
চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতিতে দেশের অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে এবং যাদের প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাদেরকেও সময় মতো পাওয়া যাচ্ছে না।এজন্য তৃণমূলে ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সেবা।
এস/ আই.কে.জে/