ছবি: সংগৃহীত
সংবিধান বা লিখিত বিধিবিধান দিয়ে কখনোই ফ্যাসিবাদ ঠেকানো যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ‘ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। নানা রকম শর্ত বা উপায় আরোপ করে জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে যদি বাধা সৃষ্টি করা হয়, তাহলে অবশ্যই গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ সংকটে পড়বে। যদি গণতন্ত্র উত্তরণের পথ সংকটে পড়ে, তাহলে সবাইকে—সমগ্র রাষ্ট্র এবং দেশকে সমস্যায় পড়তে হবে।’
আজ মঙ্গলবার (১৯শে আগস্ট) রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় প্রচলিত ধারার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন ঘটানোর তাগিদ দেন তারেক রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বিএনপি মনে করে, কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের প্রচলিত ধারার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা কিংবা কথা বলার রাজনীতির পরিবর্তে বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন ঘটাতে হবে।’
বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিএনপি এরই মধ্যে নানা পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানান দলটির ভারপ্রাপ্ত এই চেয়ারম্যান। তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপির আগামী দিনের নীতি বা রাজনীতি হবে, জনগণের জীবনমান উন্নয়নের রাজনীতি। দেশের ভেতরে হোক, বাইরে হোক—যাতে কর্মসংস্থান তৈরি করা যায়। শুধু কর্মসংস্থান সৃষ্টি নয়, আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করা। এটিই হবে আমাদের রাজনীতি।’
এ সময় পরিবেশ সংরক্ষণের পরিকল্পনার কথাও জানান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আগামী ৫ বছরে আমরা ২৫ কোটি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করেছি। একই সঙ্গে পানির চাহিদা পূরণে আমরা পুনরায় খাল খনন কর্মসূচি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছে। আমরা প্রত্যাশা করি, বিশ্বাস করি, এই নির্বাচনে নির্ভয়ে ভোট দিয়ে দেশের জনগণ তাদের পছন্দের জনপ্রতিনিধিকে নির্বাচিত করার সুযোগ পাবে।
তিনি বলেন, 'নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের রাজপথের সহকর্মী যোদ্ধারা, কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের বা তাদের সদস্যদের বক্তব্যে-মন্তব্যে গণতন্ত্রকামী জনগণের মনে নানা জিজ্ঞাসার জন্ম দিয়েছে। আমি গণতন্ত্রের পক্ষের সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি দূরত্ব তৈরি হয়, তাহলে পতিত ও পলাতক ফ্যাসিস্ট চক্রের পুনর্বাসনের পথ সুগম হয়ে উঠবে, তাদের সুযোগ তৈরি হবে। এ ব্যাপারে দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণকে সজাগ ও সতর্ক থাকার বিনীত আহ্বান জানাই।’
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির পরিকল্পনা জনগণের সামনে তুলে ধরতে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তারেক রহমান।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের সর্বস্তরের জনগণের সামনে বিএনপির পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরুন। আসুন, আমরা সকলে জনগণের সামনে দাঁড়াই। জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা জনগণকে বলি—“ভোট দিলে ধানের শীষে, দেশ গড়ব মিলেমিশে”।’
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, ‘এমন কাজ করবেন না, যাতে জনগণের মনে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হয়। মনে রাখবেন, জনশক্তি জনবল—বিএনপির মনোবল। জনগণের ভালোবাসায় রাখুন, জনগণের ভালোবাসায় থাকুন।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল প্রমুখ।
খবরটি শেয়ার করুন