মঙ্গলবার, ১৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানুষের জীবন সহজ করতে কমাতে হবে ভ্যাট-ট্যাক্স

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৫:২৫ অপরাহ্ন, ১৯শে জানুয়ারী ২০২৫

#

ছবি - সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পূরণে রাজস্ব বাড়াতে ইন্টারনেটসহ ৬৭ পণ্য ও সেবার ভ্যাট-সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অধ্যাদেশ জারি করেছে। এতে এসব পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে গেছে। এই পণ্যের তালিকায় রয়েছে ওষুধ, এলপি গ্যাস, মিষ্টি, বিস্কুট, আচার, টমেটো সস, ফলের রস, সিগারেট, সাবান ও ডিটারজেন্ট, মোবাইল সেবা ও ব্রন্ডব্যান্ড ইন্টারনেট। এসব পণ্য ও সেবা প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সাথে জড়িত।

এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ভ্যাটের বিধি-বিধান নিশ্চিত করতে, টার্নওভারের তালিকাভুক্তি ও ভ্যাট নিবন্ধনের সীমা কমানো হয়েছে। যা ব্যবসা পরিচালনার খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে। এতে করে সংকট তৈরি হবে নতুন ব্যবসায় এবং চাপে পড়বে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি। এমনিতেই কয়েক মাসের অস্থিরতায় ব্যবসায়-বিনিয়োগ নেতিবাচক ধারার চলছে। ভ্যাট বৃদ্ধিতে তা আরো জটিল করে তুলবে। নতুন করে ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধির ফলে ব্যবসা পরিস্থিতি আরো সংকটে পড়বে জানিয়ে দেশের বিভিন্ন পেশার ব্যবসায়ীরা ভ্যাট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে আলটিমেটাম দিয়েছেন। তা বাতিল করা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখারও হুমকি দিয়েছেন।

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর রাজধানীতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ১১.০৮ শতাংশ। ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছিল ৯.৯২ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল ৯.৭৩ শতাংশ। তখন মূলত কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী ক্রেতা পর্যায়ে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছিল মাত্র ৬.৯২ শতাংশ। ২০২০ সালে রাজধানীতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬.৮৮ শতাংশ, যা ২০১৯ সালে ৬.৫০ শতাংশ ছিল। এখন নতুন করে শুল্ক-কর বাড়ানোর ফলে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরেক দফা বাড়বে। এই ব্যয় অন্তত ১৫ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মানুষের আয়-ব্যয়ের ব্যবধান যখন ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে, তখন এমন সংকটের মধ্যেই নতুন করে শতাধিক পণ্য ও সেবায় সরকারের ভ্যাট-ট্যাক্সের জেরে জীবনযাত্রার ব্যয় আরেক দফা বাড়বে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষেরা এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী বলে মনে করছেন। এমনিতেই বাজারে চাল-ডাল, ডিম থেকে শুরু করে মাছ, মাংস—সব কিছুতেই যে আকাশ ছোঁয়া দাম তার উপর ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধির ফলে মানুষের জীবন নাভিশ্বাস হয়ে উঠবে। সাধারণ মানুষের খেয়ে-পরে টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়বে।

বিগত কয়েক মাস ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় সরকারের ট্যাক্স-ভ্যাট বাড়ানোর কারণে আরেক দফা মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। যার কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। শুধু গরিব মানুষই নয়, মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষের ওপরও চাপ পড়বে। যার ফলে সমাজে এক ধরনের অস্থিরতা শুরু হবে, যা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো না থাকায় মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলছে। বিশেষ করে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। যার কারণে  নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ অনেক কষ্টে আছে। মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তাদেরকে বাঁচাতে হলে সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে।

আই.কে.জে/  

ভ্যাট-ট্যাক্স

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন