রবিবার, ২২শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৮ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতীয়দের উদ্দেশে ১৪৫ বাংলাদেশি নাগরিকের বিবৃতি

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৯:০০ অপরাহ্ন, ৬ই ডিসেম্বর ২০২৪

#

বাংলাদেশের ১৪৫ জন নাগরিক এক বিবৃতিতে ভারতের জনগণকে উদ্দেশ করে বলেছেন, “সাধারণ মানুষের জীবনের সংকট বিচার করলে, দুই দেশের মধ্যে মূলত কোনো পার্থক্য নেই। আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক প্রবণতা ও শক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি, আপনারাও আপনার দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন।”

‘ভারতের জনগণের কাছে আমাদের আবেদন’ শিরোনামে শুক্রবার (৬ই ডিসেম্বর) দেওয়া এক বিবৃতিতে দেশের ১৪৫ জন নাগরিক এই কথা বলেছেন। বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ।

বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা এমন এক সংকটময় সময় পার করছি, যখন ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক শোচনীয় অবস্থায় এবং কিছু ভারতীয় উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্রমাগত এ অঞ্চলের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষতি করতে চাইছে। ভারতের জনগণ ও ভারত সরকারকে আমরা কখনো এক করে দেখি না। আমরা জানি, ভারতের জনগণও হিন্দুত্ববাদী শক্তি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়ছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শাসনের বিরুদ্ধে আমরা দীর্ঘদিন লড়াই করেছি এবং তার পতন ঘটিয়েছি। জুলাই-আগস্টের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের সময় আপনারা আমাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করেছেন। আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আপনারা এবং আপনার আন্দোলনে আমরা সংহতি প্রকাশ করেছি, যা অনেক দিনের ধারাবাহিকতা।”

বিবৃতিতে সাম্প্রদায়িকতাকে ভারতীয় উপমহাদেশের বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, “সাম্প্রদায়িকতা মানুষে মানুষে বিভাজন ঘটায়, ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদ তৈরি করে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজের অধিকার, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, নারীর প্রতি সহিংসতা এবং জনজীবনের নানা সমস্যা আড়াল করতে শাসকগোষ্ঠী সাম্প্রদায়িকতার হাতিয়ার ব্যবহার করেছে। তারা এই কৌশল ব্যবহার করে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘু জনগণের ভোট পেতে চায়। বিশেষত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় সংখ্যালঘু জনগণের ওপর হামলা বেড়ে যায়।”

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সারা বাংলাদেশে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, জমি দখল, মন্দির ভাঙচুর ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, এবং ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর সারা দেশে হিন্দু জনগণের বাড়ি, ব্যবসা ও মন্দিরে হামলা হয়েছে।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “গণ-অভ্যুত্থানের সময় অনেক রাজনৈতিক দল হিন্দুদের বাড়ি ও মন্দির পাহারা দিয়ে সম্প্রীতির নতুন নজির স্থাপন করেছে। ভারতের জাতীয় পতাকা মাড়ানোর ঘটনাতেও এ দেশের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু ভারতের অনেক সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রচার করেনি, এখনও করছে না। একটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা রুটে একটি দুর্ঘটনাকে পরিকল্পিত হামলা বলে প্রচার করেছিল। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা হয়, বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়।”

এই ঘটনার পর ভারত সরকার দুঃখ প্রকাশ করলেও মিথ্যা প্রচারণা বন্ধে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আমরা চাই, বাংলাদেশের প্রকৃত ঘটনা যথাযথভাবে তুলে ধরা হোক। এ ধরনের প্রচারণা থেকে সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং শাসকগোষ্ঠী লাভবান হয়।”

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেফতার হওয়ার পর ভারত সরকারের ভূমিকা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। “চিন্ময় কৃষ্ণের বিচার পাওয়ার অধিকারকে আমরা সমর্থন করি, কিন্তু ভারত সরকার যেভাবে তড়িঘড়ি তার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে, তা বিস্ময়কর। তাকে আদালতে হাজির করার সময় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়। তবে আমাদের দেশের জনগণের সম্মিলিত চেষ্টায় কোনো বড় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”

বিবৃতিতে বাংলাদেশের হিন্দু জনগণের অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে থাকা ও স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের ভূমিকা তুলে ধরা হয়। “জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে হিন্দু জনগণের অনেকেই লড়াইয়ে শামিল হয়ে প্রাণ দিয়েছেন।”

শেষে ভারতের জনগণের উদ্দেশে বাংলাদেশি ১৪৫ নাগরিক বলেন, “আমরা আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক প্রবণতা ও শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছি, আপনিও আপনার দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। আপনার দেশে যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জীবন দিয়েছেন, তাদের আকাঙ্ক্ষার মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে আপনি এই চক্রান্ত প্রতিহত করবেন। এই লড়াই ভারতের বৃহৎ পুঁজির শোষণ, লুণ্ঠন এবং নিপীড়ন-আধিপত্যের বিরুদ্ধে উভয় দেশের জনগণের নিরন্তর সংগ্রাম; বিভেদ, বিদ্বেষ ও ধর্মকেন্দ্রিক স্বার্থান্বেষী চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই। এই লড়াইয়ে আমরা শেষ পর্যন্ত জয়ী হব।”

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন— আনু মুহাম্মদ, সলিমুল্লাহ খান, সাঈদ ফেরদৌস, হারুন-অর-রশীদ, স্বাধীন সেন, গীতি আরা নাসরীন, ফাহমিদুল হক, কামরুল হাসান মামুন, তুহিন ওয়াদুদ, সামিনা লুৎফা, মোশরেফা মিশু, সীমা দত্ত, আলতাফ পারভেজ, কল্লোল মোস্তফা, আশরাফ কায়সার, মাহা মীর্জা, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, মানজুর-আল-মতিন, সায়ান, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, কামার আহমাদ সাইমন, প্রীতম দাশ, সারোয়ার তুষার, সালমান সিদ্দিকী ও মেঘমল্লার বসু প্রমুখ।

ওআ/

ঢাকা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন