বুধবার, ২৩শে অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৭ই কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে কারণে আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৬:০৮ অপরাহ্ন, ২৪শে জুন ২০২৪

#

কুখ্যাত ২৬ আসামির ফাঁসি দেওয়া জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া ১৯৫০ সালে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর তিনি নরসিংদী জেলার কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান। একবার নারীঘটিত ঘটনায় দুই বন্ধুসহ শাহজাহানের নামে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে গ্রামে বিচারে বসলে অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় তার সাজা হয়। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে অপরাধ জগতে জড়িয়ে চরম প্রতিশোধ নেওয়ার খেলায় মেতে ওঠেন তিনি। সেই ধারায় ক্রমেই দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী তালিকায় নাম ওঠে তার। তার উল্লেখযোগ্য একটি ডাকাতির অপারেশন ছিল ১৯৭৯ সালে মাদারীপুর জেলায়। আর এটাই ছিলো তার জীবনে সর্বশেষ অপারেশন। কারণ, এই ঘটনায় শেষ পর্যন্ত ধরা পড়তে হয় তাকে।

১৯৭৯ সালে শাহজাহানের গতিময় জীবনের সমাপ্তি হয়ে এবং এরপর থেকে তার বন্দিজীবন শুরু। তাকে ৪২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এরপর জেলে একজন জল্লাদ হিসাবে কাজ করে তিনি বহু বছরের সাজা মওকুফ করতে সক্ষম হন। সহযোগী জল্লাদ হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে শাহজাহান জল্লাদ জীবনের সূচনা করেন। টানা আট বছর এই কাজ করার পর কারা কর্তৃপক্ষ তাকে প্রধান জল্লাদের স্বীকৃতি দেন। জল্লাদ হিসেবে তার ভূমিকা এবং শৃঙ্খলা প্রদর্শনের জন্য জেল কর্তৃপক্ষ তার কারাবাসের মেয়াদ থেকে ১০ বছর পাঁচ মাস ২৮ দিন মওকুফ করে। সেই হিসাবে শাহজাহান ৩১ বছর ছয় মাস দুই দিন জেল খাটেন।

কারাগারে কুখ্যাত আসামিদের একের পর ফাঁসি কার্যকরে অংশ নিয়ে দেশব্যাপী পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন জল্লাদ শাহজাহান। ২০০১ সাল থেকে মুক্তির আগপর্যন্ত শাহজাহান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা মামলার ছয় আসামি, চার যুদ্ধাপরাধী (আবদুল কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মীর কাসেম আলী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী), কুখ্যাত জেএমবি বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানী, কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, শারমিন রিমা হত্যা মামলায় মনির ও খুকুসহ ২৬ আসামির ফাঁসি কার্যকর করেন।

কারাগারের রেকর্ড বলছে, ২০০১ সাল থেকে মুক্তির আগ পর্যন্ত জল্লাদ শাহজাহান ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছেন। যদিও জল্লাদ শাহজাহানের দাবি এই সংখ্যা ৬০। তবে যেটিই হোক, সব পরিসংখ্যানে দেশের ইতিহাসে সব থেকে বেশি ফাঁসি দেওয়ার রেকর্ড তার।

২০২৩ সালের ১৮ই জুন প্রায় ৩২ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পান জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া। ওই বছরের ২১শে ডিসেম্বর সাথী আক্তার নামের ২৩ বছরের এক তরুণীকে বিয়ে করেন তিনি। পরে ওই তরুণীর বিরুদ্ধে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ প্রতারণার মামলা করেন শাহজাহান ভূঁইয়া। এরপর আলোচনার বাইরে থেকে সাভারে চায়ের দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন তিনি।

রোববার (২৩শে জুন) সাভারের ভাড়া বাসায় তার বুকে ব্যথা উঠলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সোমবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ওআ/


জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়ার

খবরটি শেয়ার করুন