ছবি: সংগৃহীত
সিলিন্ডার গ্যাস মানুষের দৈনন্দিন নাগরিক জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাসার রান্নাঘর থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্ট, কলকারখানা ও যানবাহনে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার হচ্ছে। তবে মুহূর্তের অসচেতনতায় ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
প্রতিবছর সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা বেড়ে চলেছে। যা অনেক মানুষের প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির কারণ হচ্ছে। অথচ একটু সতর্কতা ও সচেতনতায় এ বিপদ থেকে দূরে থাকা যায়। সহজেই মানুষের জীবন ও সম্পদ বাঁচানো যায়।
সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে গ্যাস লিকেজ হওয়াকে দায়ী করা হয়। আবার অনেক সময় পাইপের ছিদ্র বা রেগুলেটরের ত্রুটির কারণে গ্যাস ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে, যা আগুনের সংস্পর্শে এলে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে।
বিস্ফোরণের দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বলা যায়, পুরোনো বা নিম্নমানের সিলিন্ডার ব্যবহার। অনেকে মেয়াদোত্তীর্ণ বা ক্ষতিগ্রস্ত সিলিন্ডার ব্যবহার করেন, যাতে অতিরিক্ত চাপের ফলে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এ অবস্থায় একটি সিলিন্ডার গ্যাস ভয়ংকর ‘বোমায়’ পরিণত হয়।
গ্যাসের চাপে ভারসাম্য নষ্ট হলে যে কোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে রান্নাঘরে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা না থাকায় গ্যাস জমে থাকে, তখন সামান্য আগুনের সংস্পর্শেই আগুন ধরে যায়। অনেকে রান্নাঘরে আগুনের কাছেই সিলিন্ডার রাখেন, যা খুবই বিপজ্জনক।
এর ফলে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। যারা বেঁচে যান, তাদের অনেকে মারাত্মক শারীরিক আঘাত পান, সারা জীবনের জন্য পুড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে তাদের বেঁচে থাকতে হয়।
আক্রান্ত ব্যক্তি একদিকে শারীরিক কষ্ট ভোগ করেন, অন্যদিকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, গ্যাস বিস্ফোরণের ফলে ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি শিল্পকারখানাসহ যে কোনো প্রতিষ্ঠানে ভয়াবহ আগুন লাগতে পারে।
অনেক সময় একটি সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ আশপাশের আরো কয়েকটি সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটায়। ক্ষতির মাত্রা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। দমকল বাহিনী এসে আগুন নেভানোর আগে অনেক কিছু ধ্বংস হয়ে যায়।
বিপর্যয় এড়াতে সবার আগে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। নিশ্চিত করতে হবে, সিলিন্ডার ব্যবহারের আগে তা ভালোভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে কী না। পাইপ, রেগুলেটর ও সংযোগস্থলগুলো নিয়মিত চেক করতে হবে, যাতে কোনো লিকেজ না থাকে। রান্নাঘরে গ্যাসের গন্ধ পেলে সতর্ক হতে হবে।
বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে, কোনো বৈদ্যুতিক সুইচ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং আগুনের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ ও নষ্ট সিলিন্ডার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কম দামে কেনা পুরোনো বা মানহীন সিলিন্ডারও জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়।
সিলিন্ডার অবশ্যই সরকারের অনুমোদিত ব্র্যান্ড ও নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী থেকে সংগ্রহ করা উচিত।
সরকারের পক্ষ থেকেও নিয়মিত মান যাচাই, অবৈধ রিফিলিং বন্ধ করা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রচারণা চালানো জরুরি।
গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন ও প্রচার চালিয়ে মানুষকে সিলিন্ডারের নিরাপদ ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জানানো উচিত। প্রতিটি মানুষের উচিত নিজেদের ও পরিবারকে নিরাপদ রাখতে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা।
এক মুহূর্তের অসচেতনতা পুরো জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে। নিরাপত্তার দায়িত্ব সবার আগে, তাই নিজে সচেতন হোন এবং অন্যদেরও সচেতন করুন।
এইচ.এস/