ছবি: সংগৃহীত
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ভারতের সমালোচনায় সরব হয়েছেন। গতকাল সোমবার (১লা সেপ্টেম্বর) তিনি দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে ‘সম্পূর্ণ একপক্ষীয় বিপর্যয়’ আখ্যা দিয়েছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের পরপরই তিনি এই মন্তব্য করেন। খবর আমেরিকার সম্প্রচারমাধ্যম এনবিসির।
ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে শেয়ার করা এক পোস্টে বলেন, ভারত শুল্ক শূন্য করার প্রস্তাব দিয়েছে, কিন্তু এখন সেটা ‘বেশ দেরি হয়ে গেছে।’
তার দাবি, ভারতের এ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল আরও ‘অনেক বছর আগে।’ তবে কবে ভারত এমন শূন্য শুল্কের প্রস্তাব দিয়েছিল সে ব্যাপারে কিছু জানাননি তিনি।
এর আগে, ট্রাম্প ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। প্রথমে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলেও গত মাসে রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্কও চাপানো হয়।
ভারত এ শুল্ককে ‘অন্যায্য, অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন’ বলে বর্ণনা করেছে। ট্রাম্প আবারও অভিযোগ করেন, ভারত রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কিনছে এবং আমেরিকায় বিপুল পরিমাণ পণ্য বিক্রি করছে। অথচ আমেরিকার রপ্তানি পণ্যে ভারত উচ্চ শুল্ক বসাচ্ছে।
ট্রাম্প লিখেছেন, ‘এর কারণ হলো—ভারত এত দিন ধরে আমাদের ওপর এত বেশি শুল্ক আরোপ করেছে—যা অন্য কোনো দেশ করে না—ফলে আমাদের ব্যবসাগুলো ভারতে পণ্য বিক্রি করতে পারছে না। এটা পুরোপুরি একপক্ষীয় বিপর্যয়।’
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতে আমেরিকার পণ্যে গড় শুল্ক ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। অপরদিকে আমেরিকা ভারতীয় পণ্যে গড় শুল্ক নিয়েছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ।
গত কয়েক মাস ধরে আমেরিকা-ভারত সম্পর্ক অবনতির দিকে যাচ্ছে। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে যে সম্পর্ক উন্নতির ধারায় ছিল, তা ভেঙে পড়ছে। আমেরিকার কয়েকজন কর্মকর্তা রাশিয়ার তেল আমদানি নিয়ে ভারতের সমালোচনা বাড়াচ্ছেন। ভারত পাল্টা অভিযোগ করেছে, আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেরাও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করছে, অথচ দিল্লিকে নিশানা করছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত মাসে বলেছিল, ‘যে দেশগুলো আজ ভারতের সমালোচনা করছে, তারা নিজেরাই রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করছে। পার্থক্য হলো, আমাদের ক্ষেত্রে এটা জাতীয় প্রয়োজন, কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে তা নয়।’
চলতি বছরের মে মাসে ভারত ‘জিরো-ফর-জিরো’ শুল্ক চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল। অর্থাৎ, উভয় দেশই পরস্পরের ওপর কোনো শুল্ক আরোপ করবে না। বিশেষ করে, ইস্পাত, অটো পার্টস ও ওষুধ খাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ আমদানির ক্ষেত্রে উভয় পক্ষ শুল্ক শূন্য রাখবে।
কিন্তু দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কোনো চুক্তি হয়নি। এরপরই ট্রাম্প ভারতীয় রপ্তানি পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক বসান।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি ৩১শে আগস্ট থেকে ১লা সেপ্টেম্বর চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত এসসিও সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই নেতা অংশীদারত্বের গুরুত্বের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকার অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, আমেরিকার শুল্ক নীতির কারণে চীন-ভারত ঘনিষ্ঠ হচ্ছে এমন ধারণা ঠিক নয়। তিনি এসসিও সম্মেলনকে ‘লোক দেখানো আয়োজন’ হিসেবে আখ্যা দেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিল্লি ও বেইজিংয়ের সম্পর্ক উন্নত হলে দুই দেশই উপকৃত হবে। তবে দীর্ঘদিনের সীমান্ত ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে খুব ঘনিষ্ঠ অংশীদার হওয়ার সম্ভাবনা কম।
জিওম্যাক্রো স্ট্র্যাটেজি বিসিএ অ্যাকসেসের প্রধান কৌশলবিদ মার্কো পাপিক বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন বড় বিষয়। এতে ভারত গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি জ্ঞানের নাগাল পাবে, যা তাদের শিল্পায়ন ও উৎপাদন খাতে সহায়তা করবে।’
পাপিক আরও বলেন, ‘কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে আমেরিকা চীনকে মূল হোতা হিসেবে দেখানোর প্রচারণা যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে। আর এর ফলে বহুমুখী শক্তির বিশ্বব্যবস্থা আরও পোক্ত হচ্ছে।’
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন