ছবি: সংগৃহীত
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রাবিনিময় কারসাজিতে জড়িত হিসেবে ১২ জনকে শনাক্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তারা হলেন– বিভিন্ন ব্যাংকের ২৮টি বুথের দায়িত্বে থাকা ১০ ইনচার্জ ও মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তা।
গত মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, দেশে ডলার কারসাজির নেপথ্যে রয়েছে কিছু ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের একটি সংঘবদ্ধ চক্র। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা প্রতিদিন যে শতকোটি টাকার বেশি মূল্যের ডলার ও বৈদেশিক মুদ্রা আনেন, তা জালিয়াতির মাধ্যমে কুক্ষিগত করছে চক্রটি।
জাল ভাউচারে যাত্রীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে পরে তা খোলাবাজারে (কার্ব মার্কেট) ছাড়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি বিশেষ এনফোর্সমেন্ট টিম হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অভিযান চালিয়ে সংঘবন্ধ ওই চক্রটি বিদেশি মুদ্রা গ্রাস করার প্রমাণ পেয়েছে।’
দুদকের একটি সূত্র জানায়, বিমানবন্দরে এনফোর্সমেন্ট টিমের অভিযানে ডলার কারসাজিতে জড়িত হিসেবে ওই ১২ জনের নাম এসেছে। তারা যাত্রীদের কাছ থেকে কম দামে ডলার ও অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা কিনে খোলাবাজারে বেশি দামে বিক্রি করেন। লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যাংক ও নিবন্ধিত মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হয়েও তারা বেআইনিভাবে বিদেশি মুদ্রা কিনে ব্যক্তিগত লাভের জন্য খোলাবাজারে বিক্রি করছেন। এই চক্রের পেছনে প্রভাবশালী কেউ জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করছেন দুদক কর্মকর্তারা।
দুদকের ওই এনফোর্সমেন্ট টিম গত ৫ই ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অভিযান চালিয়ে ডলার কারসাজির তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে বলে বিফ্রিংয়ে জানিয়েছেন দুদক সচিব।
দুদক বলছে, বিমানবন্দরে বিদেশি মুদ্রা কারসাজিতে যাদের নাম এসেছে তারা হলেন– সোনালী ব্যাংক বুথের ইনচার্জ মো. ইলিয়াস, জনতা ব্যাংক বুথের ইনচার্জ আনোয়ার পারভেজ, অগ্রণী ব্যাংক বুথের ইনচার্জ সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. ফয়েজ, রূপালী ব্যাংক বুথের ইনচার্জ মো. শরীফুজ্জামান শাকিল, পূবালী ব্যাংক বুথের ইনচার্জ মো. নূর হোসেন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক বুথের ইনচার্জ মো. তারেক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক বুথের ইনচার্জ মো. আনসার রহমান, যমুনা ব্যাংক বুথের ইনচার্জ মো. সাইফুল আলম ও মো. নিপু, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক বুথের ইনচার্জ সানজিদা, এভিয়া মানি এক্সচেঞ্জারের ইনচার্জ মো. আসাদুল ও ইমপেরিয়াল মানি এক্সচেঞ্জারের ইনচার্জ মো. হেলাল।
আরো পড়ুন: জাবিতে গৃহবধূকে ধর্ষণ: মূল পরিকল্পনাকারীসহ গ্রেফতার ২
হযরত শাহজালালে ৯টি ব্যাংকের ২৮টি বুথ ও দুটি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের বুথ ৬টি, জনতা ব্যাংকের ৪টি, অগ্রণী ব্যাংকের ৪টি, রূপালী ব্যাংকের ২টি, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের ২টি, পূবালী ব্যাংকের ২টি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ২টি, যমুনা ব্যাংকের ২টি ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বুথ ৪টি।
ব্যাংকের এসব বুথ ও মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানে বিদেশি মুদ্রা বিনিময়ে কারসাজির ঘটনা অনুসন্ধান শিগগির শুরু করার কথা জানিয়েছে দুদক। এ ব্যাপারে আজ বৃহস্পতিবার একটি বিশেষ অনুসন্ধান টিম গঠন হওয়ার কথা রয়েছে। অভিযুক্তরা কবে কোন বৈদেশি মুদ্রা কত দামে যাত্রীদের কাছ থেকে কিনেছেন এবং কত দামে খোলাবাজারে বিক্রি করেছেন, তারা কত টাকা লাভ করেছেন, কতজনকে জাল ভাউচার দেওয়া হয়েছে, ডলার কেনার তথ্য কেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে এন্ট্রি হয়নি, কেন তা রিজার্ভে জমা হয়নি ইত্যাদি বিষয় খতিয়ে দেখবে দুদকের ওই টিম। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, অভিযুক্তরা ডলার কারসাজির দায় এড়াতে পারেন না। অপরাধের রেকর্ড ধরে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
জানা গেছে, বিমানবন্দরে ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশি মুদ্রা কেনা ও সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে অন্তর্ভুক্ত করতে একটি নিরপেক্ষ ডেস্ক খোলা হতে পারে, যেখানে দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। তারা মূলত ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবেন।
এসি/