রবিবার, ১লা জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাতে বিয়ে, সকালেই স্বামীর টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যা ঘটল

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:২৩ অপরাহ্ন, ১৭ই মে ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

রাতে বিয়ে করে সকাল হতেই স্বামীর বাড়ির টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি করে পালিয়েছেন নববধূ ও তার খালাতো বোন। চুরির নতুন কৌশলী এ চক্রের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী স্বামী হোসেন আলী। গতকাল শুক্রবার (১৬ই মে) বিকেলে লালমনিরহাটের আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। হোসেন আলী আদিতমারী উপজেলার তালুক পলাশী গ্রামের খিজির মামুদের ছেলে।

অভিযুক্ত নববধূ রুমানা খাতুন (৩০) একই উপজেলার সাপ্টিবাড়ী এলাকার এনছার আলীর মেয়ে। অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন বিয়ের ঘটক একই এলাকার তালুক পলাশী গ্রামের জোবাইদুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম ও লালমনিরহাট পৌরসভার বিবাহ নিবন্ধনকারী কাজি আমজাদ হোসেন সরকার।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, এক বছর আগে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটায় দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তুতি নেন কৃষক হোসেন আলী। ঘটক জোবাইদুল ইসলাম ও রবিউল ইসলাম বিয়ে দেওয়ার কথা বলে ১৪ই মে হোসেন আলীকে ডেকে নিয়ে লালমনিরহাট শহরে নিয়ে যান। সেখানে পাত্রী হিসেবে স্বামী পরিত্যক্ত রুমানা খাতুনকে দেখালে তার পছন্দ হয় এবং তাৎক্ষণিক তাদের কাজি আমজাদ হোসেনের বিবাহ রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে এক লাখ টাকা দেনমোহরে বিবাহ দেন।

বিয়ের পর নববধূ রুমানাকে নিয়ে রাতে বাড়িতে ফিরতে চাইলে তাদের সঙ্গে আসেন ঘটক জোবাইদুলের মেয়ে। পরদিন সকালে স্বামী হোসেন আলীর ঘরে থাকা তামাক বিক্রির ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ও দেড় ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করে ঘটকের মেয়েসহ নববধূ তার বাবার অসুস্থতার অজুহাতে চলে যান। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও না আসায় এবং মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় সন্দেহ হয় বর হোসেন আলীর। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ঘরে গচ্ছিত থাকা টাকা ও স্বর্ণালংকার নেই।

ঘটনার পর থেকে ঘটকদের কাছে গেলেও তারা কোনো পাত্তা দেননি। বিবাহের নকল চাইতে গেলে বিবাহ নিবন্ধনকারী কাজি আমজাদ হোসেন সরকার তাদের নকল সরবরাহ না করে উল্টো হুমকি দেন। অবশেষে বর হোসেন আলী বুঝতে পারেন, টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করতেই এ চোর সিন্ডিকেট বিয়ের নাটক তৈরি করেছে। 

নববধূ ও তার সঙ্গে আসা ঘটকের মেয়ে এসব চুরি করে চক্রটি তা ভাগ-বাঁটোয়ারা করেছে। পরে চোরাই টাকা ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করতে বিবাহ নিবন্ধনকারী, নববধূ রুমানাসহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন বর হোসেন আলী।

হোসেন আলী বলেন, ‘ঘটকরা জানত, বাড়িতে তামাক বিক্রির টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিল। এসব চুরি করতে তারা বিয়ের নাটক তৈরি করে আমার বাড়িতে স্ত্রী হিসেবে পাঠায় রুমানা ও ঘটকের মেয়েকে। বিয়ে দেওয়ার বকশিশ হিসেবে ঘটক জোবাইদুল টাকাও নিয়েছে ১০ হাজার। তারা মূলত চুরি করতে বিয়ের নাটক তৈরি করেছে।’ তিনি ন্যায়বিচার দাবি করেন।

অভিযুক্ত ঘটক জোবাইদুলকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। নববধূ রুমানা খাতুনের ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ থাকায় তার সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রুমানাসহ এ চক্রের কাজই হলো বিয়ের নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও জিম্মি করে অর্থ আদায় করা। তাই স্থায়ীভাবে কোথাও বসবাস করেন না রুমানা।

অভিযুক্ত লালমনিরহাট পৌরসভার বিবাহ নিবন্ধনকারী কাজি আমজাদ হোসেন সরকার বলেন, ‘রুমানা-হোসেন আলী নামের কারও বিবাহ রেজিস্ট্রি করা হয়নি। তারা অহেতুক আমার নাম বলতে পারে।’ 

এ বিষয়ে আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আকবর বলেন, এটি চুরি চক্রের নতুন কোনো কৌশল হতে পারে। অভিযোগটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এইচ.এস/

বিয়ে

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন