ছবি: সংগৃহীত
অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা 'পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের' (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি ২০০৭-'০৮ সালের বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই সরকারের দাপুটে ও প্রভাবশালী উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। একপর্যায়ে হয়ে ওঠেন এক এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মুখপাত্র।
তিনি মনে করেন, 'নির্বাহী আদেশে বা প্রশাসনিকভাবে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে কিংবা নির্বাচন না করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে, সেটা খুব বিবেচনাপ্রসূত হবে না। এখন এ রকম সিদ্ধান্ত নিলে তা ভবিষ্যতের জন্য একটা প্রিসিডেন্স (দৃষ্টান্ত) তৈরি করবে। এর ফলাফল ভালো হবে না। এ কারণে দল নিষিদ্ধ করা নয়, বরং অপরাধীদের বিচারের বিষয়ে জোর দেওয়া উচিত।'
তিনি বলেন, 'অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি হওয়ার পাশাপাশি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ক্ষমাপ্রার্থনা ও অনুশোচনা প্রকাশেরও প্রয়োজন রয়েছে। তাদের উপলব্ধির যে একটা পরিবর্তন হয়েছে, জনগণের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রমাণ করতে হবে। এ পর্বগুলো অতিক্রম করেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রশ্নটা আসে। এরপর জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কী হবে।'
তার মতে, 'সম্প্রতি রিফাইন্ড (পরিশোধিত) আওয়ামী লীগ নিয়ে কিছু কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হলো, আওয়ামী লীগ দল হিসেবে কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তিত বা সংশোধিত হবে, সেটা তাদের নিজেদেরই খুঁজে বের করতে হবে। অন্য কোনো কোয়ার্টার বা মহল থেকে এটা নিয়ে ফ্যাসিলিটেট করা উচিত হবে না। মোদ্দাকথা, দলের (আওয়ামী লীগ) ভেতর থেকেই পরিবর্তনটা আসতে হবে এবং তাদের উদ্যোগ ও সক্ষমতার মাধ্যমেই এটা করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনকে কোনোভাবেই রাষ্ট্রীয় এজেন্ডায় পরিণত হতে দেওয়া যাবে না। কারণ, এ দল ও এর নেতাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী ও আর্থিক অপরাধের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।' দৈনিক প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। গত ৬ই এপ্রিল তার সাক্ষাৎকার প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণে প্রকাশিত হয়।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, 'আমি নীতিগতভাবে মনে করি, আগামী নির্বাচন ইনক্লুসিভ বা অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া দরকার। কারও জন্য দরজা বন্ধ করা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত নয়। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের যে স্পিরিট, সেটার মধ্যেও কাউকে বাদ দেওয়া নয়, বরং সবাইকে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টা রয়েছে।'
তার মতে, 'এখানে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তা হলো বিগত স্বৈরাচারী সরকারকে (আওয়ামী লীগের সরকার) ব্যাপক জনরোষের মুখে বিদায় নিতে হয়েছে। সেই সরকারের নির্দেশে বহু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, অনেকে আহত হয়েছেন। সার্বিকভাবে পুরো জাতিকে একধরনের মানসিক ট্রমার মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছিল। এগুলো তো ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।'
তিনি বলেন, 'এ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোর বিচার হতে হবে। শুধু এগুলো নয়, গত আমলে যারা বড় বড় অর্থনৈতিক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদেরও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। নির্বাচন কমিশন তাদের আইনকানুন, শর্তাবলির মাধ্যমে এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য ঘোষণা করতে পারে। এ ধরনের অভিযুক্তদের যে কোনো দলীয় দায়িত্বে থাকাটাও অযোগ্য ঘোষণা করা যেতে পারে।'
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন