ফাইল ছবি
জাতিসংঘ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের সঙ্গে রীতিমতো বেঈমানি শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি। গোলাম মাওলা রনি তার ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক ভিডিও আলোচনায় এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে তারা তাদের বিভিন্ন যে সংস্থা রয়েছে এবং তাদের যেসব আন্তর্জাতিক প্রেশার গ্রুপ রয়েছে সেসব প্রেশার গ্রুপ দিয়ে সরকারের ওপর যে চাপ তৈরি করছে, এটি আমরা আশা করিনি। দ্বিতীয়ত, তারা প্রকাশ্যে এবং আকার-ইঙ্গিতে বা পর্দার অন্তরালে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার জন্য, ক্ষমতায় বসানোর জন্য এবং আওয়ামী লীগের যারা দোসর আছে তাদের নানাভাবে দেশে এবং দেশের বাইরে সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য যেসব কর্মকাণ্ড করছে তা এককথায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বা তার সরকারের সঙ্গে মারাত্মক বেঈমানি, মারাত্মক অসহযোগিতা।’
তিনি বলেন, আমরা যারা প্রথম থেকে বলে আসছিলাম ড. ইউনূসের আগমনের পেছনে একটা ম্যাটিকুলাস ডিজাইন রয়েছে। যা মুহাম্মদ ইউনূস নিজে বলেছেন, এটার পেছনে মাস্টারমাইন্ড আছে, একাধিক মাস্টারমাইন্ড। এ রকম কয়েকজন মাস্টারমাইন্ড সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা নিজে বলেছেন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের ড. ইউনূস পরিচয় করে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পেছনে দেশে এবং বিদেশি চক্রান্ত রয়েছে—এটা রীতিমতো ওপেন সিক্রেট।
রনি বলছেন, আমরা দেশের ভেতরে থেকে টুকটাক বলেছি এবং দেশের বাইরে থেকে আরো খোলাখুলিভাবে বিভিন্ন মানুষ বলার চেষ্টা করেছেন। এখানে সেই যে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় জর্জ সরোস, যিনি মার্কিন ডিপস্টেটের পক্ষে বিভিন্ন দেশের সরকার পরিবর্তনের জন্য বিনিয়োগ করেন। তারপর সেই সরকারের পতন হলে যারা ক্ষমতায় আসে তাদের কাছ থেকে কয়েকশ গুণ অর্থ আদায় করেন।
তিনি বলেন, তো বাংলাদেশে এ রকম জর্জ সরোসের বিনিয়োগ ছিল এই কথা সবাই আলোচনা করছে। বিশেষ করে তার ছেলে যখন বাংলাদেশে এলেন এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করলেন তখন আমরা ধরে নিলাম যে ডাল মে কুচ কালা হ্যায়।
জাতিসংঘ যা করে তা মূলত আমেরিকারই কাজ উল্লেখ করে রনি বলেন, ‘কোনো একটা দেশের যুদ্ধ বাধাতে হবে, সেখানে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ দিয়ে সাধারণ পরিষদ দিয়ে জাতিসংঘের যে মানবাধিকার কমিশন, সেটা দিয়ে এরপর জাতিসংঘের অন্য যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমন ইউএনএস, সিআর তারপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘের যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলো দিয়ে তারা বিভিন্ন দেশের নানা রকম কর্মকাণ্ড চালায়।'
তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর আমরা এ রকম অনেক প্রতিষ্ঠানের অসাধারণ কতগুলো তৎপরতা দেখতে পেলাম। বিশ্বব্যাংক খুবই ইতিবাচক মনোভাব দেখাল ২০২৪ সালের প্রথম ৩-৪ মাস আইএমএফ এতটা কো-অপারেটিভ হলো যে ওই প্রথম ৩-৪ মাসে আইএমএফ আওয়ামী লীগ জামানাতে যে ঋণগুলো দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুত ছিল এবং সেখানে প্রায় তিনটি ঋণের কিস্তি তারা ছাড় দিয়েছিল।
তিনি বলেন, ড. মুহম্মদ ইউনূসের জামানাতে তারা ইমিডিয়েটলি সব কিস্তির সুদ নেবেই না, আরো নতুন হয়তো ১০-১৫ বিলিয়ন ডলার তারা দিতে পারে আর বিশ্বব্যাংক হয়তো ৪০-৪৫ বিলিয়ন ডলার দেবে চীন থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে ইত্যাদি মিলে আমরা প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলারের দেশি-বিদেশি সাহায্য গ্র্যান্ড ঋণ আশা করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল যে ২০০ বিলিয়ন ডলার তো দূরের কথা, ২ বিলিয়ন ডলারও আসছে না বরং আওয়ামী লীগ জামানাতে যেসব চুক্তি ছিল, সেই চুক্তির অধীনে যেসব ঋণ আসার কথা ছিল সেসব ঋণের বিরাট অংশ ফেরত গেল।’
রাজনৈতিক এ বিশ্লেষক বলেন, ‘যখন রোহিঙ্গাদের বিষয়টি এলো, দেখলাম জাতিসংঘ মহাসচিব এলেন—তিনি পাঞ্জাবি পরে সেই ইফতার পার্টিতে অংশগ্রহণ করলেন। লাখ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য দিলেন এবং তিনি ঘোষণা করলেন, আগামী যে ঈদুল ফিতর মানে এই যে ২০২৬ সালের যে ঈদ, এই ঈদের উৎসবটি রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশে গিয়ে করতে পারবেন। আমরা তো মহাখুশি যেখানে মহাসচিব এসেছেন জাতিসংঘের, যেখানে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা কথাবার্তা বলেছেন, এরপর আর কথা থাকে না।'
তিনি বলেন, 'কিন্তু পরিস্থিতি দেখা গেল উল্টো। একজন রোহিঙ্গা সেখানে তো গেলই না, উল্টো আরো প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ নতুন রোহিঙ্গা আমাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করল এবং সীমান্তের ওপারে আরো প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গা নো ম্যানস জোনে বা কাছাকাছি জায়গাতে তারা অপেক্ষা করছে বাংলাদেশে ঢোকার জন্য এবং আন্তর্জাতিক সংস্থায়, এমনকি জাতিসংঘ চেষ্টা করছে বাংলাদেশের বাকি রোহিঙ্গাদের ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য এটা রীতিমতো আত্মহত্যার মতো রীতিমতো বেঈমানি।’
গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘জাতিসংঘ এই বাংলাদেশ থেকে কী অর্জন করতে চেয়েছিল বা তাদের কী উদ্দেশ্য ছিল, আমরা বলতে পারব না। কিন্তু ইদানীং যেটা হচ্ছে যে পুরো জাতির সঙ্গে এবং আমেরিকা বলতে গেলে এই সরকারের সঙ্গে তাদের যে দহরম-মহরম সম্পর্ক ছিল সেটা তো নেই বরং উল্টো আচরণ করছে। এখন তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চাচ্ছে। স্পষ্ট তারা আওয়ামী লীগকে চাচ্ছে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করুক তারা চাচ্ছে। এই কথা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন শুনছেন, এনসিপি নেতৃবৃন্দ যখন শুনছেন, জামায়াতের লোক, যারা এই জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মূল মাস্টারমাইন্ড ছিলেন এটি তাদের জন্য ভীষণ রকম অপমান।’
খবরটি শেয়ার করুন
