ছবি: সংগৃহীত
সরকারিভাবে ফার্মের মুরগির ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও বাজারে তা কার্যকর হয়নি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে ডিম।
এদিকে পাবনার ঈশ্বরদীতে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে কম দামে বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে সোনালী ও ব্রয়লার মুরগি। কিন্তু ডিমের দাম বেশি।
ডিম উৎপাদনকারী খামারিরা বলছেন, ডিম উৎপাদন খরচের চেয়ে নির্ধারিত দাম কম হওয়ায় লোকসানে পড়তে হবে খামারিদের। তাই সরকারের বেঁধে দামে ডিম বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
বুধবার (১৮ই সেপ্টেম্বর) সকালে ঈশ্বরদী বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি সোনালী মুরগি খুচরা ২১০-২২০ টাকা, ব্রয়লার ১৬৫-১৭০ টাকা ও ডিম ৫০-৫৫ টাকা হালি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি সোনালী মুরগির দাম যেখানে ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা সেখানে ঈশ্বরদীতে বেচাকেনা হচ্ছে ২১০-২২০ টাকা। এছাড়া সরকারের বেঁধে দেওয়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির খুচরা মূল্য ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৭০ টাকায়। তাই সোনালী ও ব্রয়লার মুরগির দাম সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে বেচাকেনা হচ্ছে।
তবে প্রতি পিস ডিমের মূল্য সরকার খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও ঈশ্বরদীতে বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৭০ পয়সায়।
ঈশ্বরদীর পোল্ট্রি খামারিরা জানান, সরকার ডিমের দাম উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু খামারিদের এক পিস ডিম উৎপাদন করতে এর চেয়ে বেশি খরচ হয়। বাচ্চা ও খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বছরের পর বছর খামারিরা লোকসান গুনছেন। এতে ঈশ্বরদীসহ সারাদেশের হাজার হাজার খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এবার সরকার খামারিদের সঙ্গে আলোচনা না করেই ডিম ও মুরগির যে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে এতে খামারিদের লোকসান গুনতে হবে। তাই খামারিরা সরকারের নির্ধারিত দামে কোনোভাবেই ডিম বিক্রি করতে পারছেন না। ঈশ্বরদীতে উৎপাদন পর্যায়ে ১১ টাকা ৭০ পয়সা, আড়তে ১১ টাকা ৯০ পয়সা ও সর্বোচ্চ খুচরা ১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৭০ পয়সা দরে বেচাকেনা হচ্ছে ডিম।
খামারিরা আরও জানান, ঈশ্বরদীতে সোনালী মুরগি খামারে প্রতি কেজি ১৯০-১৯৫ টাকা আর বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকা। অথচ সরকার উৎপাদক অর্থাৎ খামার পর্যায়ে এ মুরগির দাম ২৬১ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু খামারিদের কাছ থেকে কেউ ২৬১ টাকা কেজি দরে কিনছে না। কারো কাছে এ দরে বিক্রিও করতে পারছেন না। ব্রয়লার মুরগির দামও সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম। কেউতো এসে বলছে না সরকারের নির্ধারিত দামে মুরগি বিক্রি করো।
উপজেলার কালিকাপুর এলাকার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত খামারি আকমল হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করলে খামারিদের পথে বসতে হবে। মুরগির খাদ্য, ওষুধ ও বাচ্চার দাম বৃদ্ধির কারণে যেখানে এক পিস ডিম উৎপাদন করতে খরচ হয় প্রায় ১১ টাকা। সেখানে খামারি বা উৎপাদকরা কীভাবে ১০ টাকা ৫৮ পয়সায় ডিম বিক্রি করবে। উৎপাদক পর্যায়ে ডিমের দাম কমাতে হলে খাদ্য, ওষুধ ও মুরগির বাচ্চার দাম কমাতে হবে। তাহলেই সরকার নির্ধারিত দামে খামারিরা ডিম বিক্রি করতে পারবে।
শাহ আলম নামে এক খামারি বলেন, আমাদের খামারে সোনালী মুরগি ১৯৫ টাকা কেজি ও ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। শুনেছি সরকার সোনালী ও ব্রয়লার মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু আমরাতো সেই নির্ধারিত দাম পাচ্ছি না। কেউ সেই দামে আমাদের কাছে থেকে মুরগি কিনছে না।
আরও পড়ুন: চীন-চট্টগ্রাম রুটে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু
ঈশ্বরদী বাজারের সোনালী ও ব্রয়লার মুরগির খুচরা বিক্রেতা আসলাম হোসেন বলেন, সোনালী খুচরা ২২০ টাকা ও ব্রয়লার ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামেই মুরগি বেচাকেনা হচ্ছে।
ঈশ্বরদী বাজারের ডিমের আড়তদার সাইদুর রহমান টিটু বলেন, ৫০ টাকা হালি দরে ডিম বিক্রি করছি। সরকারের নির্ধারিত দামে ডিম বেচাকেনার বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানায়নি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পাবনার সহকারী পরিচালক মাহমুদ হাসান রনি বলেন, মুরগি ও ডিমের দাম সরকার নির্ধারিত মূল্যে বাস্তবায়নের জন্য আমরা বাজার মনিটরিং শুরু করেছি। সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে কেউ মুরগি ও ডিম বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসি/কেবি