ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
পয়লা বৈশাখ উদযাপনের ঐতিহ্যগত নানা আয়োজন ও অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি ও উসকানি দেওয়ার অপপ্রয়াসের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ১৮ বিশিষ্ট নাগরিক। আজ শনিবার (১২ই এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘পয়লা বৈশাখ ঘিরে যেসব সাংস্কৃতিক ও সামাজিক উৎসব হয়, তা আমাদের জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রকাশের এক মহা আয়োজনও বটে। এই আয়োজনকে কলঙ্কিত বা বাধাগ্রস্ত করার কোনো অধিকার কারও নেই।’
বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীন ও সুশৃঙ্খলভাবে পয়লা বৈশাখ উদযাপনে বাধা কিংবা উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি, মহল ও সংগঠনগুলোকে যে কোনো ধরনের অপতৎপরতা থেকে বিরত রাখতে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকার, বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব প্রতিষ্ঠানের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, মনে রাখতে হবে, পয়লা বৈশাখ উদযাপন যেমন কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, তেমনি তার সঙ্গে ধর্মবিশ্বাসের সংঘাতও নেই। মোগল সম্রাট আকবরের শাসনামল থেকে এ জনপদের ধর্ম-বর্ণ-জাতিগোষ্ঠীনির্বিশেষে সব মানুষ এ উৎসব উদযাপন করে এসেছেন। একে বিতর্কিত করার কোনো অবকাশ নেই।
বিবৃতিদাতারা বলেছেন, ‘আমরা তীব্র ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি, কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মিডিয়ায় কিছু উগ্র সাম্প্রদায়িক মহল আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ পয়লা বৈশাখ নববর্ষ পালন ও এর নানা অনুষ্ঠান নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টির অসিলা খুঁজে বেড়াচ্ছে। বর্ষবরণের শোভাযাত্রায় কী ধরনের পোশাক পরা যাবে, কী ধরনের প্ল্যাকার্ড বহন করা যাবে অথবা যাবে না—এসব অযাচিত অনধিকার চর্চার ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তৃতা–বিবৃতি দিয়ে চলেছে। তাদের এসব বিবৃতি ও উগ্র আচরণের হুংকার আমাদের পঞ্চাশ-ষাটের দশকে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর সেবাদাস উগ্র সাম্প্রদায়িক মহলের সন্ত্রাসী আচরণের কথা মনে করিয়ে দেয়।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ দেশের মানুষ সংগ্রাম ও ’৭১ সালের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ওই সব ধর্ম ব্যবসায়ী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সব অপচেষ্টা পরাজিত করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। ২০২৪ সালের জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নিষ্ঠুর কর্তৃত্ববাদী, গণহত্যাকারী লুটেরা সরকারকেও উৎখাত করে জবাবদিহিমূলক সুশাসন, বৈষম্যহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং অসাম্প্রদায়িক ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কাজে স্ব–স্ব অবস্থান থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ সময় পয়লা বৈশাখ পালনের অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি কিংবা তার কোনো অনুষ্ঠানের ওপর অযাচিত বিধিনিষেধ আরোপের অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ওই মহলের উগ্র সাম্প্রদায়িক বিবৃতি এবং উসকানিমূলক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।
‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামের মধ্যে ধর্মীয় বিদ্বেষ খুঁজার চেষ্টা করা সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপচেষ্টারই নামান্তর বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, তাদের প্রশ্রয় দিয়ে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে উদাহরণ সৃষ্টি করলেন, তা প্রশ্নবিদ্ধ ও নিন্দনীয়। ‘আদিবাসী’দের উপস্থিতি যেমন অন্তর্ভুক্তিমূলক কাজের অংশ, তেমনি তাদের ‘আদিবাসী’ পরিচয়ের অস্বীকৃতি তাদের প্রতি সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অবহেলারই নজিরমাত্র।
গণমাধ্যমে বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। এতে সই করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, সেন্ট্রাল উইমেন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর পারভীন হাসান, আসকের চেয়ারপারসন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, অধ্যাপক খাইরুল চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, আইনজীবী তবারক হোসেইন, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্র কুমার নাথ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী, মানবাধিকারকর্মী সাঈদ আহমেদ ও আদিবাসী অধিকারকর্মী হানা শামস আহমেদ।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন