ছবি - সংগৃহীত
রাজধানী ঢাকা অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, ৩০৬ বর্গকিলোমিটারের এই মেগা সিটিতে ২ কোটিরও বেশি মানুষ বসবাস করেন। জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাসা ভাড়াও। রাজধানীতে প্রতি বছর কোনো কারণ ছাড়াই বাড়ি ভাড়া বাড়ানো হয়, এটা এক ধরনের নিয়মে পরিণত হয়েছে। বাড়িওয়ালারা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে নিজ নিয়মে ভাড়া বাড়িয়ে চলেছেন। রাজধানীর বাসিন্দাদের অধিকাংশ মানুষেরই এখানে নিজের আবাসন নেই। অন্যের বাড়িতে ভাড়ার বিনিময়ে থাকে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ। বাকি ১০ শতাংশ বাড়িওলার খেয়ালখুশির ওপর নির্ভর করে লাখো ভাড়াটিয়ার বসবাস।
নতুন বছর শুরু হওয়ার সাথে সাথে ভাড়াটিয়াদের নতুন করে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। বিশেষ করে নির্দিষ্ট আয়ের চাকরিজীবী ও স্বল্প আয়ের মানুষদের বড় ধরনের অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়। বাসা ভাড়ার জন্য মোট আয়ের ৩০ শতাংশ নির্ধারিত থাকলেও এলাকা ভেদে তা কখনো দ্বিগুণ হয়। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অন্যদিকে বছর বছর বাসা ভাড়া বৃদ্ধিতে স্বল্প আয়ের মানুষদের নাভিশ্বাস উঠেছে।
রাজধানীতে বাসা খুঁজতে সবসময়ই কর্মস্থলের দূরত্ব এবং বাচ্চাদের স্কুলের যাতায়াত বিবেচনা করা হয়। নামীদামী স্কুলগুলোর পাশে বাসা ভাড়া বেশি থাকে। এছাড়া বড় বড় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশেও বেশি ভাড়া নেয়া হয়। কারণ এখানে ছাত্র-ছাত্রীরা মেস করে অনেকে একসঙ্গে থাকে। ফলে চাহিদার তুলনায় বাসার স্বল্পতার কারণে এক শ্রেণির বাড়িওয়ালারা বেশি দামে ব্যাচেলরদের ভাড়া দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ, ঢাকা কলেজ, ভিকারুননিসা স্কুলসহ বেশকিছু স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজিমপুরের আশেপাশে থাকার কারণে অনেক অভিভাবক এই এলাকায় থাকতে বাধ্য হন। আর অধিকাংশ ভাড়াটিয়া শিক্ষার্থী বা ব্যাচেলর হওয়ায় কারণে বাড়িওয়ালারা বাড়তি সুবিধা নেন। এমন সমস্যা অন্যান্য এলাকায়ও আছে। মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর থেকে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় বাড়ি ভাড়া অনেক বেড়ে গেছে। একসময় যানজটের কারণে মিরপুর এলাকায় মানুষ থাকতে চাইতো না। এখন মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর মিরপুর এলাকা অত্যন্ত আকর্ষণীয় আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিণত হয়েছে। আর সুযোগ বুঝে ওই এলাকার বাড়িওয়ালারা ভাড়া হু হু করে বাড়িয়ে দিয়েছে।
১৯৯১ সালে ভাড়া নিয়ন্ত্রণে ‘বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন’ প্রণয়ন করা হয়েছে। তিন দশক পেরিয়ে গেলেও স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠিত হয়নি। নজরদারির জন্যও নেই কোনো মনিটরিং সেল। যার জন্য বাড়িওয়ালা ইচ্ছেমতো বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করে থাকে। আইনের কোনো প্রয়োগ না থাকার কারণে বাড়িওয়ালারা ইচ্ছেমতো চলছে। লিখিত চুক্তি, বাড়ি ভাড়ার পরিমাণ, ভাড়া আদায়ের পদ্ধতি, ভাড়া বৃদ্ধির প্রক্রিয়া সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় আইন থাকলেও তার কোনো বাস্তবায়ন নেই।
বাংলাদেশ ভাড়াটিয়া পরিষদের তথ্য বলছে, গত ১০ বছরে রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে পাঁচ গুণ। ভাড়াটিয়াদের পক্ষে কথা বলা এ সংগঠন বাড়তি ভাড়ার যৌক্তিকতা চ্যালেঞ্জ করে একাধিক সরকারি দফতরের দ্বারস্থ হলেও আসেনি কোনো সমাধান। নিরাপদ আবাসন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কিন্তু ভাড়া নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগে সব সরকারই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ফলে মধ্য ও স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে বাড়ি ভাড়া এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আই.কে.জে/