বুধবার, ১৫ই জানুয়ারী ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২রা মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখছে সিরামিক খাত

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৬:৪৭ অপরাহ্ন, ১৪ই জানুয়ারী ২০২৫

#

ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখছে সিরামিক খাত। এই খাতে জড়িত প্রায় ৭০টিরও বেশি কোম্পানি এ লক্ষ্যে কাজ করছে। ফলে কয়েক দশক ধরে সিরামিক খাতের সঙ্গে জড়িত এ কোম্পানিগুলো দেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অভাবনীয় অবদান রাখছে। 

খাতটির কারখানা ও অফিসগুলোয় কর্মসংস্থান ছাড়াও এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ডিলার, রিটেইলার, সাপ্লাইয়ারসহ আরো তৃতীয় পক্ষ যারা জড়িত তাদের মাধ্যমেও অনেক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে এবং হচ্ছে। 

এ শিল্পখাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, শহর অঞ্চল ছাড়াও গ্রামাঞ্চল ও মফস্বলগুলোয়ও নগরায়ণের ছোঁয়া লেগেছে। সেক্ষেত্রে সিরামিক টাইলসের চাহিদা ভবিষ্যতে আরো বাড়তে থাকবে। ক্রমবর্ধমান এ চাহিদাকে মাথায় রেখে আরো প্রডাকশন লাইন সম্প্রসারণ, ফ্যাক্টরি এলাকা সম্প্রসারণ ও নতুন ফ্যাক্টরি তৈরি হলে কর্মসংস্থান আরো বাড়বে। অন্যদিকে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানির সুযোগ তৈরি হলেই প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা থাকবে।

বিসিএমইএর তথ্যানুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের সিরামিক টাইলস ও স্যানিটারি পণ্যের চাহিদা ছিল শতকরা ৮৬ ভাগ এবং টেবিলওয়্যার পণ্যের শতকরা ৯৮ ভাগ চাহিদা দেশীয় কোম্পানিগুলো পূরণ করেছে। সুতরাং শুধু পাল্লা দেয়া নয়, বরং দেশীয় সিরামিক পণ্য বিদেশী পণ্যের তুলনায় অনেকাংশে এগিয়ে। আর তা সম্ভব হয়েছে ১০-১২ বছরে বাংলাদেশে দেশীয় কোম্পানিগুলোর আপামর প্রযুক্তিগত ও দক্ষতাগত কারণে।

প্রাচীনকাল থেকেই গৃহসজ্জার অন্যতম অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে সিরামিক পণ্য। মধ্যযুগে বিত্তশালী পরিবারগুলোর অন্দরমহলে দেখা যেত সিরামিক শিল্পের নানা রকম বাহার। কালের বিবর্তনে চাহিদা অনুযায়ী এ শিল্পে যোগ হয়েছে নানা ধরনের পণ্য। নির্দিষ্ট গণ্ডি ছাড়িয়ে সিরামিক পণ্য এখন পৌঁছেছে প্রান্তিক মানুষের হাতেও। জানা গেছে , ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আমলে বগুড়ায় তাজমা সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ দেশে আধুনিক সিরামিক শিল্পের যাত্রা হয়। তারপর অভ্যন্তরীণ চাহিদার জোগান দিতে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পাকিস্তান সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, যা ১৯৬৬ সাল থেকে উৎপাদনে আসে। স্বাধীনতার পর কোম্পানিটির নাম পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়ায় পিপলস সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেড। পরবর্তী সময়ে একে একে প্রতিষ্ঠিত হয় আরো বেশ কয়েকটি সিরামিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মুন্নু সিরামিক, ১৯৯৭ সালে শাইনপুকুর সিরামিক ও ১৯৯৮ সালে আরএকে সিরামিক প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দেশীয় সিরামিক শিল্প গতি লাভ করে। বাংলাদেশ সিরামিক উৎপাদক ও রফতানিকারক সমিতির (বিসিএমইএ) দেশে এখন ৭০টি সিরামিক কারখানা (টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার) আছে। এসব কোম্পানিতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আছে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। দেশে বর্তমানে সিরামিক পণ্যের বাজার ৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকারও বেশি। দেশে বর্তমানে সিরামিক পণ্যের বাজার প্রায়  ৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকার।

বিসিএমইএর তথ্যানুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের সিরামিক টাইলস ও স্যানিটারি পণ্যের চাহিদা শতকরা ৮৬ ভাগ এবং টেবিলওয়্যার পণ্যের শতকরা ৯৮ ভাগ চাহিদা দেশীয় কোম্পানিগুলো পূরণ করেছে। এই অগ্রগতি নিয়ে অনেকে মনে করেন, শুধু পাল্লা দেয়া নয়, বরং দেশীয় সিরামিক পণ্য বিদেশী পণ্যের তুলনায় অনেকাংশে এগিয়ে। আর তা সম্ভব হয়েছে ১০-১২ বছরে বাংলাদেশে দেশীয় কোম্পানিগুলোর আপামর প্রযুক্তিগত ও দক্ষতাগত উন্নয়নের ফলে। দেশীয় কোম্পানিগুলো গুণগত মানে উন্নতি নিশ্চিতকরণ, চাহিদা অনুযায়ী নিত্যনতুন ডিজাইন ও মডেলের পণ্য তৈরি এবং বিস্তৃত ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশের বাজারে এক দশক ধরে আধিপত্য বিস্তার করেছে।

রফতানি প্রসঙ্গে এ খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট একেএম জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘সিরামিক খাতে যে শ্রেণীর পণ্যের সবচেয়ে বেশি রফতানি হয় এবং ভবিষ্যতেও অপার সুযোগ রয়েছে, সেটি হলো টেবিলওয়্যার। টেবিলওয়্যার আমরা একচেটিয়াভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে সুনামের সঙ্গে রফতানি করে আসছি। ইউরোপ, আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলোয় আমাদের টেবিলওয়্যারের নিয়মিত ক্রয়াদেশ আসছে। টেবিলওয়্যারের পরেই রফতানি ক্ষেত্রে বিশেষ সম্ভাবনা আছে স্যানিটারিওয়্যারের। আগামীতে বিশেষ সাইজ, যেমন বড় স্ল্যাব, ডিজাইন এবং বিদেশী ট্রেন্ডের সিরামিক টাইলস বাংলাদেশে উৎপাদন হলে এক্ষেত্রেও রফতানিতে উন্নতির মুখ দেখবে।’

সিরামিকে দেশীয় কাঁচামাল  আমদানি নিয়ে তিনি বলেন, সিরামিক পণ্য উৎপাদনে যেসব কাঁচামাল ব্যবহার হয়, তার চাহিদা দেশীয় উৎস থেকে শতকরা অনূর্ধ্ব ১০ ভাগ পূরণ করা সম্ভব। বাকি ৯০ ভাগ কাঁচামাল আমদানি করে আনতে হয়। তিন-চার বছরে দেশের অভ্যন্তরে ডলারের জোগান কম থাকায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের বিপরীতে দেশীয় মুদ্রার দর ওঠানামা করার জন্য দেশীয় কোম্পানিগুলো কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছে। এ কারণে কাঁচামাল আমদানিতেও এর প্রভাব পড়ছে।, 

কেসি/ওআ/কেবি

সিরামিক

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন